পরবর্তীতে ভোটারদের সু-শাসন ও দুর্নীতিবিরোধী কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেওয়া দিশানায়েকে দ্বিতীয় দফা ভোট গণনার পর বিজয়ী হন। দ্বিতীয় দফায় ভোটারদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দের প্রার্থীদের ভোট যোগ করা হয়।

দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন জানায়, দিশানায়েকে তিনি মোট ৫৭ লাখ ৪০ হাজার ১৭৯ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রেমদাসা পেয়েছেন ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ৯০২ ভোট।

৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে শ্রীলঙ্কার জনগণের উদ্দেশে এদিন বলেন, ‘এই বিজয় আমাদের সবার।’

শনিবারের এই নির্বাচনটি ছিল ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের পর গণবিক্ষোভে দেশের নেতা গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচন।

প্রথম দফায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করেন। তিনি দ্বিতীয় দফার গণনা থেকে বাদ পড়েন, যা শুধু দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে হয়।

বিক্রমাসিংহে তার উত্তরসূরিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই প্রিয় জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সম্মানের সঙ্গে আমি এর ভবিষ্যৎ নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দিচ্ছি।’

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য দিশানায়েকে উৎপাদন, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো খাতগুলোর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে করা চুক্তি চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তিনি দেশের দরিদ্রতম মানুষের ওপর সংস্থাটির কঠোর প্রভাব কমানোর চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।

এই সপ্তাহান্তের ভোটের আগে ১৯৮২ সালের পর থেকে শ্রীলঙ্কার আটটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সব কটিতে প্রথম দফা গণনাতেই বিজয়ী নির্ধারিত হয়েছে। তাই এই নির্বাচনকে দেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। শনিবার প্রায় ১৭ মিলিয়ন শ্রীলঙ্কান ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন। দেশের নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটি ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তবে শনিবার গভীর রাতে পুলিশ ‘জননিরাপত্তার’ কথা উল্লেখ করে কারফিউ ঘোষণা করে। পরে স্থানীয় সময় দুপুরে তা তুলে নেওয়া হয়।

দিশানায়েকে ভোটারদের কাছে দুর্নীতিবিরোধী কঠোর পদক্ষেপ ও সু-শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা সংকটের পর থেকে জনগণ যে নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তন দাবি করে আসছে তার সঙ্গে গভীরভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। তিনি এখন অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেওয়ার দুটি কাজের মুখোমুখি হবেন। শ্রীলঙ্কার ওপেন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আথুলসিরি সামারাকুন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হলো, কিভাবে এই অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা যায়।’

সূত্র : বিবিসি