বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার ছাত্র হত্যায় আওয়ামী লীগ সরকারকে মদদ দিয়েছেন-এমন অভিযোগ তুলে তাদের দলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন নেতাকর্মীরা।
শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবস্থান গ্রহণ করে নেতাকর্মীরা তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। শনিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী জাসদ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক মাস্টারের লাশ সামনে রেখে ১৯৭২-এর ৩১ অক্টোবর জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
স্বাধীনতাত্তোর সব স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে জাসদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অকাতরে জীবন দিয়েছেন জাসদের নেতাকর্মীরা।’
‘কিন্তু কিছু আদর্শচ্যুত নেতা দলে তাদের কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্ব নিরঙ্কুশ করার জন্য বারবার দল ভেঙেছে। বহুধা বিভক্ত জাসদের বর্তমান ৩ অংশ জাসদ (রব), জাসদ (আম্বিয়া-প্রধান), জাসদ (ইনু-শিরিন)।
এর মধ্যে ক্ষমতালোভী ইনু ও শিরিন আখতার-সিদ্দিক মাস্টার, অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন, তাহের, ডা. মিলন, ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর সঙ্গে বেঈমানি করে পনেরো বছরের অবৈধ ফ্যাসিস্ট, হাসিনা সরকারের নির্লজ্জ দালালি করে প্রচুর অর্থ, বিত্ত ও সম্পদের মালিক হয়েছে।’
এতে আরো বলা হয়, ‘জাসদের অন্য দুই অংশ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথের সংগ্রামে থাকলেও ইনু গ্রুপ স্বৈরশাসক হাসিনা কর্তৃক শত শত শিশু, কিশোর, ছাত্র-জনতাকে পাখির মতো গুলি করে হত্যার মদদ দিয়েছে, আন্দোলন নস্যাৎ করতে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করেছে। ফলস্বরূপ স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের জাসদ কেন্দ্রীয় অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। শুধু ঢাকার কেন্দ্রীয় অফিসই নয়, সারা দেশে অনেক জেলা জাসদ কার্যালয় আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর করেছে।
বেঈমান ইনু-শিরিন এবং তার কতিপয় মোসাহেব কর্মীদের জনরোষের মধ্যে ফেলে গা ঢাকা দিয়েছে।’
এতে আরো বলা হয়, ইনু-শিরিনের স্বেচ্ছাচার যারা মেনে নিতে পারেননি তারা ইনুদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে বেরিয়ে এসে আলাদা জাসদ গঠন করেছেনে কিংবা দলীয় রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কিন্তু জাসদের ১৯৭২ সালের ঘোষিত রাজনীতিকে এখনো ধারণ এবং লালন করেন, অন্য কোনো দলে যোগ দেননি তারা সবাই ইনু-শিরিনের ন্যক্কারজনক ভূমিকার মাধ্যমে আপসহীন জাসদ রাজনীতিকে কলঙ্কিত করার তীব্র ঘৃণা এবং নিন্দা জানাচ্ছে। ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ সবাই জাসদের গৌরবোজ্বল অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করার জন্য, জাসদের আপসহীন সংগ্রামী ধারাকে উজ্জীবিত করার জন্য সারা দেশে সক্রিয়, নিস্ক্রিয় জাসদ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার তাগিদ অনুভব করছেন।’
‘তাদের সেই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে সারা দেশের আপসহীন সংগ্রামী জাসদ কর্মীদের পক্ষ থেকে আমরা আজ বিকেল ৫টায় ৩৫/৩৬ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবস্থান গ্রহণ করেছি।
সেই সঙ্গে স্বৈরাচারের দোসর ইনু ও শিরিনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’
জাসদের সংগ্রামী নেতাকর্মীদের পক্ষে মোহন রায়হান, নাজমুল হক প্রধান, ডা. মুশতাক হোসেন, আব্দুল কাদের হালদার, বাদল খান, কামাল উদ্দিন আহমেদ, বাহারুল হাসান সবুজ, ফজলুর রহমান মুরাদ, আবুল হোসেন, মওলানা শহীদ, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, তোহা মুরাদ, মোখলেসুর রহমান মুকুল, মন্জুর রহমান, শফিকুল ইসলাম লিটন, তুষার চৌধুরী, সোলায়মান মাসুদ, নবা চৌধুরী, সাইদুর রহমান, আব্দুস সালাম খোকন, রফিকুল ইসলাম রুবেল, হান্নান চৌধুরী, গৌতম শীল প্রমুখ।