বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত আছেন। এখন তাকে কোন প্রক্রিয়ায় মুক্তি দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি রাষ্ট্রপতি।

এদিকে, রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ছিলেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানিয়েছেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফখরুল দলীয় চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও তাকে অবহিত করেন।

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। যদিও বিএনপির দাবি, মিথ্যা মামলায় তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি সরকার ও সরকারি দলের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তবে দীর্ঘ আইনি লড়াই এবং রাজপথের আন্দোলনে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। পরে করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনে খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। তার সেই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ প্রতি ছয় মাস পরপর বাড়ানো হচ্ছে। গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও ওই শর্তের যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করেছে সরকার।

সাময়িক মুক্তির পর থেকে খালেদা জিয়া হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকছেন। বিএনপির দাবি, খালেদা জিয়া সাময়িক কারামুক্ত হলেও কার্যত তিনি গৃহবন্দি। তিনি বর্তমানে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ‘হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায়’ গত ৮ জুলাই ভোররাতে তাকে ‘ফিরোজা’ থেকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত ২২ জুন গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরদিন তার হৃদযন্ত্রে বসানো হয় পেসমেকার। চিকিৎসা শেষে ২ জুলাই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। গত চার বছরে বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন লিভার বিশেষজ্ঞ এনে তার লিভারে অস্ত্রোপচারও করা হয়।