ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পলাতক ছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব রুহুল আমিন। গতকাল তার ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে মসজিদটিতে। দু’পক্ষের সংঘর্ষে মসজিদের ভেতরে রণক্ষেত্র তৈরি  হয়। এ সময় একে অপরের ওপর জুতা এবং জুতার বাক্স ছুড়ে মারেন তারা। করা হয় ভাঙচুর। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন মুসল্লি আহত হয়েছেন। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কেন নতুন খতিব নিয়োগ দেয়া হয়নি, এনিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল সকাল ১১টার দিকেই আনাগোনা বাড়তে থাকে মসজিদ প্রাঙ্গণে। প্রায় দুই শতাধিক ‘মাদ্রাসা শিক্ষার্থী’ মসজিদের দুই গেটে অবস্থান নেন। মসজিদের একাধিক মুসল্লি জানতে চাইলে তারা বলেন, গোপালগঞ্জ থেকে এসেছেন। মুসল্লিরা জানান, এ সময় ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে রুহুল আমিনকে মসজিদের উত্তর গেটে দেখা যায়। তিনি খতিবের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এরপর তাকে আর আর দেখা যায়নি। এরপর মসজিদের মেহরাবে বয়ান দিচ্ছিলেন নামাজের দায়িত্ব পাওয়া আবু ছালেহ পাটোয়ারী। বয়ান শুরু হওয়ার পর একদল অনুসারী নিয়ে প্রবেশ করেন খতিব রুহুল আমিন। বসেন সামনের কাতারে। কয়েক মিনিট বসার পর তার অনুসারী একজন বলেন, খতিব যখন এসেছেন তাহলে বয়ানের দায়িত্ব তাকেই দেয়া হোক। একই কথা বলেন আরও অনেকে। শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। পূর্বে থেকে অবস্থান নেয়া মুসল্লিরা তাতে না করেন। এরই একপর্যায়ে তিনি মাইক্রোফোন হাতে নেন। বয়ানরত আবু ছালেহ পাটোয়ারীকে মিম্বর থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে অপদস্ত করা হয়। পরে অন্য দল রুহুল আমিনের অনুসারীদের প্রতিরোধ করেন। তখন স্লোগান দেয়া শুরু হয় নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার। একপর্যায়ে দু’ভাগ হয়ে হাতাহাতি শুরু হয়। জুতা ও জুতা রাখার ট্রে নিয়ে একে অপরের দিকে নিক্ষেপ করতে থাকেন। প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আশেপাশের এলাকা থেকে আসতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। লোকজন বৃদ্ধি পাওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন রুহুল আমিনের অনুসারীরা। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝে উত্তর গেট দিয়ে অনুসারীদের নিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। এ সময় তাদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামীবিরোধী নানা স্লোগান দেয়া হয়। এরইমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। মুসল্লিরা বলেন, রুহুল আমিনের সঙ্গে আসা একদল যুবক শুধুমাত্র ভাঙচুরে লিপ্ত ছিলেন। তারা কাঁচ, আসবাবপত্র এগুলো ভাঙচুর করেন।

পরিস্থিতি শান্ত হলে অধিকাংশ মুসল্লি নামাজ না পরে বেরিয়ে অন্যান্য মসজিদে যান। আর সেখানে থাকা মুসল্লিরা নামাজের স্থানটি পরিষ্কার করেন। সুন্নত নামাজের জন্য স্বল্প সময় দিয়ে ১টা ১০ মিনিটের দিকে আজান দেন। জানা যায় এই আজান সাধারণ ১টা ২০ মিনিটের দিকে হয়ে থাকে। এরপর নামাজ আদায় হয় এবং খুব পরিপাটিভাবেই মোনাজাত আদায় করেন। আসরের নামাজের সময় সেখানে দেখা যায় পরিবেশ শান্ত। চারিদিকে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র।

রুহুল আমিনকে ২০২২ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার খতিব হিসেবে নিয়োগ দেয়। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। আসরের নামাজে আসা হেফাজতে ইসলামের কর্মী মো. আবু জাফর বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে এতটাই নিকৃষ্টভাবে পরিচালিত হয়েছে যে, খতিব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা লোককে দেয়া হয়েছে। আমাদের এই ১৫ বছরে অত্যাচার করা হয়েছে। এখনো আওয়ামী জাহিলিয়ার দোসররা ঘুরে বেরাচ্ছে ও চক্রান্ত করছে। জাতীয় মসজিদে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে তারা বিশ্বের কাছে নেগেটিভ মেসেজ দিতে চায়। 

এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব একটা সম্মানিত পদ। এই পদটাকে কেউ অসম্মানিত করতে চায়নি। এজন্য সবাই চাচ্ছিলেন যে, রুহুল আমিন নিজেই পদত্যাগ করুন। কিন্তু তিনি পদত্যাগ না করে শুক্রবার তার অনুসারীদের নিয়ে মসজিদে এসে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিলেন। সূত্রটি জানায়, দুই জুমার নামাজ অনুপস্থিত থাকায় রুহুল আমিনকে লিখিতভাবে শোকজ করা হয়েছিল। শোকজের জবাবও দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে রুহুল আমিন অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছেন। আর খতিবের অনুপস্থিতিতে ইমাম এবং ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস পদে থাকা দু’জন কর্মকর্তাসহ মোট চারজনকে বাই রোটেশন জুমার নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল যিনি জুমা পড়িয়েছেন তিনি ফাউন্ডেশনের অন্যতম মুহাদ্দিস আবু ছালেহ পাটোয়ারী।

একজন মুসল্লি বলেন, সাবেক খতিব অন্যায়ভাবে শেখ হাসিনাকে সাপোর্ট করে এসেছিলেন। যখন হাসিনার পতন হয়, তখন তিনি পালিয়ে যান। কিন্তু হঠাৎ কোন সাহসে বা কী কারণে তিনি এখানে এসেছেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমার ধারণা তিনি পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এখানে এসেছেন। এই সংঘর্ষে অনেক লোক আহত হয়েছেন। রক্তাক্ত হয়েছেন। পরে রুহুল আমিন আর নামাজ পড়াতে পারেননি। আর এখান থেকে যেহেতু রুহুল আমিন পালিয়ে গেছেন, তাহলে তিনি কেন এলেন? শেখ হাসিনার দোসররা সব সেক্টর থেকে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তারা পাল্টা বিপ্লব করার চেষ্টা করছেন। এটাও তেমন। তারা এখানে আরেকটি বিপ্লব করার জন্য এসেছেন। তারা আগেভাগে একটা সেটআপ করে রেখেছেন, আজকে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। আর সাধারণ মানুষ তাদের আবার বিতাড়িত করে দিয়েছেন।

এসব ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, যখন মসজিদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, তখন মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে বসতে বলা হয়। মসজিদের আদব রক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু উত্তেজিত মুসল্লিদের বসানো যাচ্ছিল না। মাইকে বলা হয়, সবাই বসুন। দরুদ শরীফ পড়ুন। আল্লাহর ঘর মসজিদ। আমরা সবাই শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে বসে যাই। মসজিদের সম্মান রক্ষা করি। মাইকে যখন এসব কথা বলা হচ্ছিল, তখন ভাঙচুরের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এরপরও মাইকে সবাইকে অনবরত শান্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু কাউকে বসানো যাচ্ছিল না। পরে পরিবেশ কিছুটা ঠাণ্ডা হলে সাধারণ মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করেন। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ পড়ান আবু ছালেহ পাটোয়ারী। নামাজ শেষে সাধারণ মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। এর কিছু পরেই মসজিদ থেকে স্লোগান দিতে দিতে একদল মুসল্লি বের হন।

ওদিকে ঘটনার পর সেখানে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। খবর পেয়ে মসজিদে যান সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। এরপর পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়। তখন জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজের পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মুসল্লিদের দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার মানবজমিনকে বলেন, খতিব ছুটিতে ছিলেন। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

সূত্র: মানবজমিন

নয়াপল্টনে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সমাবেশ। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর আড়াইটায় এ সমাবেশ শুরু করে দলটি।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেবেন সমাবেশে।

সমাবেশ যৌথভাবে সঞ্চালনা করবেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও তানভীর আহমেদ রবিন।

এর আগে সকাল ১১টা থেকেই সমাবেশস্থলে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে এগিয়ে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ জুলাই-আগস্ট-এর অভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের প্রকৃত তালিকা তৈরি, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে ভয় ও অপমানের রাজনীতির অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান।


নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কারের কার্যক্রম শুরু ও নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মধ্য দিয়ে জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই সময়ের দাবি। এই কাজে দৃশ্যমান ভূমিকা পালনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান।


আজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, বিকাল ৪টায় জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার; জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনা; সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা; পাচারের টাকা ফেরত ও খেলাপী ঋণ আদায়; ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মন্দির-মাজার এবং নারীর ওপর হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং পাহাড়ে হামলা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এই আহ্বান জানান। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। এসময় উপস্থিত ছিলেন-সিপিবি’র কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান ও পরেশ কর এবং সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপক এম এম আকাশ, ক্বাফি রতন, কাজী রুহুল আমিন, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, জলি তালুকদার, আসলাম খান, লুনা নূর, হাফিজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ইদ্রিস আলী, মোসলেউদ্দিন, হাসিনুর রহমান রুশো প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।


সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের ৪০ দিন পার হলেও এখনো মধুচন্দ্রিমা কেটেছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা এখনো নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারল না। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে পারল না। দখলদারিত্ব চাঁদাবাজি থেকে দেশকে মুক্ত করে ভয়ের রাজত্বের অবসান ঘটাতে দৃশ্যমান রূপরেখাও সামনে আনতে পারল না। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা, নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বিষয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।


সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন এলাকায়, পার্বত্য এলাকায় যে হত্যাকাণ্ড ভাঙচুর সংগঠিত হলো তা মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এর আগে সংগঠিত ভাঙচুর চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের উদ্বেগ কমছে না। এসব ঘটনায় দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তি নানামুখী কার্যক্রম করারও সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ বিরাজনীতিকরণের নানা অপচেষ্টার বিরুদ্ধে হুসিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতৃবৃন্দ।  


সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন সরকার কি করছে, কি করতে চায়? এসব কথা দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, রাজনীতিবিদরা জানেন না। নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন করেন, তাহলে কাদের সাথে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ চালাচ্ছে? দেশবাসী তা জানতে চায়।


নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করবে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিনের জমে থাকা স্বৈরাচারী ব্যবস্থার উচ্ছেদের জন্য বেশ কিছু জায়গায় সংস্কারের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব উত্থাপন করে, পারলে ওইসব কাজের সূচনাও করবে। বাকি কাজ সম্পন্ন করবে নির্বাচিত সরকার। এসব কাজ করতে হবে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে। এসব কাজে জনগণের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য জনজীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনাকেই অন্যতম কাজ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।


নেতৃবৃন্দ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও, বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনরা গত ৫৩ বছরে মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমতায় থাকার খুঁটি হিসেবে অনেক সময় ব্যবহার করা হয়েছে। এই সুযোগে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ারও দুঃসাহস দেখাচ্ছে। কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থানকে দেশবাসী গ্রহণ করবে না।


সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন অব্যাহত রেখে ভালো রাজনীতি আশা করা যাবে না। দেশে মুক্তবাজারের নামে লুটপাটের চলমান অর্থনীতি এই সংকটের গোড়ার কথা। দুর্নীতি-লুটপাট আজ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুর্নীতি ও লুটপাটের যেসব খবর বেরোচ্ছে তা দেশবাসীর কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থে আইন করে, কমিশন ভোগ করে, চাঁদাবাজি করেই তারা তাদের অর্থ সম্পদ গড়ে তুলেছে, টাকা পাচার করেছে। এরা দেশকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেই নিজেদের আবাসভূমি গড়ে তুলেছেন। আজ তাই এমন নীতি করতে হবে যাতে করে, উৎপাদনের সাথে জড়িত নয়, এমন জনগোষ্ঠী কখনোই অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারবেনা। তাহলে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা যাবে। এদেশে কমিউনিস্টরা এজন্যই দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে চলেছে।


নেতৃবৃন্দ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা অনেক পরিবর্তন করেছেন, দেখেছেন, কিন্তু মানুষের মুক্তি আসেনি। যেসব রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের ওপরে অধিকাংশ দেশবাসী ভরসা করেছে তারাই নিজেদের স্বার্থে নীতিহীন রাজনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে। আবার এর বিপরীতে বিরাজনীতিকরণের ধারাকে সামনে আনতে অনেকেই চেষ্টা চালিয়েছে। মানুষের মুক্তি আনতে গেলে এই দুই পথের অবসান ঘটাতে হবে। নীতিহীন রাজনীতি, বিরাজনীতিকরণকে ‘না’ বলে, নীতি-নিষ্ঠ রাজনীতিকে ‘হ্যাঁ’ বলে তার পতাকা তলে সমবেত হতে হবে।


নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাই-আগস্ট এর গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা যাতে কোনোভাবে হাইজ্যাক না হয়ে যায় তার জন্য দেশবাসীকে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে নিজ নিজ দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সিপিবি এবং বামপন্থীরা জনগণের পাশে থেকে এই সংগ্রামকে এগিয়ে নেবে। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরানা পল্টনস্থ পার্টির কার্যালয় এসে শেষ হয়। এছাড়াও সিপিবির আহ্বানে আজ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে অযৌক্তিক সময় নষ্ট করবে না অন্তর্বর্তী সরকার।

শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন ইসলামী দলের প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপের সময় এ কথা বলেন তিনি। এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আসন্ন দুর্গাপূজায় কেউ যাতে নৈরাজ্য করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে ইসলামী দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে দলগুলোর প্রতিনিধিরা সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

নেতারা জানান, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানানো হয়। তারা আরো জানান, সংলাপে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য নিশ্চিত করা, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ সাংবিধানিক বেশ কিছু সংস্কারের দাবিও উপস্থাপন করেছেন নেতারা।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা যৌক্তিক সময়ে সব কিছুর সমাধান করে দেশকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন এবং নেজামে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা।

আওয়ামী লীগ দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে বিএনপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী বীর জনগণকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদ, আহত, পঙ্গুত্ববরণকারী প্রতিটি পরিবারের প্রতি রাষ্ট্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও তার নিবন্ধন বাতিল চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহবুবুল উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে রিটকারী আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া নিজেই শুনানি করেন।

গত সোমবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়।

মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া রিটটি করেন। এই রিটে যেসব প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনার নামে রয়েছে, সেগুলোর নাম পরিবর্তনও চাওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া রিটে দেশ সংস্কারের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সর্বনিম্ন তিন বছর চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিদেশে পাচার করা ১১ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনতে এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বদলি চাওয়া হয়েছে।

রিটকারী আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া বলেন, রিটের বিষয়গুলোতে রুল ও আদেশ চাওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিচারপতি কে এম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হবে।