বাবুল চন্দ্র সূত্রধর

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, একজন নারী শ্রমিক একজন পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে ৪৩ শতাংশ কম মজুরী পেয়ে থাকেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি হলেও মজুরী বৈষম্য যথাযথভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ; এটি নারী ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায়। অপরাপর সমীক্ষায় দেখা যায়, পোষাক কারখানায় ৮৪.৭ শতাংশ নারী মৌখিক, ৭১.৩ শতাংশ মানসিক, ২০ শতাংশ শারীরিক ও ১২.৭ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হন। রাজধানী ঢাকায় একজন নারী গৃহশ্রমিক যেখানে ৩৫০০-৪০০০ টাকা মজুরী পান সেখানে একজন পুরুষ গৃহশ্রমিক পান ৬০০০-৭০০০ টাকা। (সূত্র: প্রণব মজুমদার, নারীর ক্ষমতায়ন ও মজুরী বৈষম্য, বাংলা ট্রিবিউন, ১৫ জুন, ২০২৩)।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরার একটি উপজেলা শ্যামনগর, যা সুন্দরবন ও বঙ্গ্পোসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। আবহাওয়া ও প্রকৃতির মায়াবী অথচ নির্মম খেলার এক অনন্য জায়গা এটি। বিশেষত, উপকূলবর্তী গ্রামগুলোর অবস্থান এমন যে, হঠাৎ কোন অচেনা মানুষ এখানে আসলে এলাকার মানব বসতির উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু মানুষ সহ সকল প্রাণীই পরিবেশের সন্তান। তারা যুগ যুগ ধরে এ মাটিতেই সুখে-দু:খে দিনাতিপাত করে চলেছেন। তাদের মনে কোন কষ্টই দেখা যায় না প্রকৃতির বিরূপ এই আচরণের জন্য। এলাকার বাসিন্দাদের মূল পেশা কৃষি হলেও অনেকেই কোন না কোনভাবে সমুদ্র বা পানির সাথে জীবিকাকে সম্পৃক্ত করেছেন। কারণ শুধু কৃষিতে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। এর মধ্যে যারা অতি দরিদ্র, ভূমিহীন, দু:স্থ বা বঞ্চিত অবস্থায় রয়েছেন, তাদের কথা তো বলতেই হয় না। আর যারা অধিক জমির মালিক কিংবা চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতির সাথে জড়িত তারা অনেকটা ভাল অবস্থায় রয়েছেন। তবে এসব পরিবারের সংখ্যা বেশ কমই।

দু:স্থ অবস্থা থেকে নিজেদের পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি এমন একটি জনগোষ্ঠীর নাম মু-া। মু-াদেরকে যারা চেনেন, হতদরিদ্র বলেই চেনেন। শ্যামনগরের বেশ ক’টি উপকূলীয় গ্রামে মু-াদের বসবাস রয়েছে। গ্রামগুলোর মধ্যে শ্রীফলকাঠি, উত্ত্র কদমতলা, খেগড়াঘাট, কচুখালী, ধূমঘাট, অস্তুখালী, কৈখালী, হরিনগর, ভেটখালী প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিইব) নামক একটি গবেষণাভিত্তিক সেবা সংস্থার প্রকল্প এলাকা হিসেবে এই এলাকার মু-া জনগোষ্ঠীর সাথে এক সময় ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল (এখনও আছে), বছর দশেক আগে। দেখতাম কি অবর্ণনীয় কষ্ট এরা করে চলেছেন জীবন ও জীবিকার তাগিদে। শুধু কষ্ট নয় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক কাজও তাদেরকে করতে হচ্ছে। নারী-পুরুষ, যুব-যুবা, কিশোর-কিশোরী সকলেই এখানে মজুরীভিত্তিক কাজ করে থাকেন। এমনকি লেখাপড়া করে এমন অনেকেই মজুরী-শ্রমের সাথে জড়িত।

তবে এখন কথা বলব মুন্ডা নারীদের জীবনযুদ্ধ নিয়ে, কাজেকর্মে পুরুষের চেয়ে কোন অংশে কম যান না তারা। বর্ণিত বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে নারীদের প্রতিকূল সামাজিক পরিবেশও সামাল দিতে হয়, যেখানে জানা-অজানা অনেক বিষয় জড়িয়ে পড়ে। ধান বোনা, কাটা, মাড়াই সহ কৃষির যাবতীয় কাজ, মাটি কাটা, খাল খনন, রাস্তা ভরাট, মাছ ধরা, গবাদি পশুর পরিচর্যা, ইটভাটা- সমাজ জীবনের সকল প্রকার শ্রমসাপেক্ষ কাজেই যেন তাদের সিদ্ধহস্ত অংশগ্রহণ। কিন্তু মজুরীতে তারা পুরুষের অর্ধেক।

২০১৪-১৫ সনের দিকে এ অঞ্চলে একজন পুরুষের দৈনিক মজুরী ছিল দুশো টাকা আর নারীর একশো টাকা। রিইব সংস্থার মাসিক গণগবেষণা বৈঠকে গ্রাম বা জনগোষ্ঠীভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ পর্বে অনেক সমস্যার কথা আসলেও বৈষম্যমূলক মজুরীর কথা আসেনি। অভিজ্ঞ উজ্জীবক যখন বিষয়টি উত্থাপন করলেন, তখন নারীরা একপ্রকার অবাক হয়ে যান। সূচনাকাল থেকে চলে আসার কারণে এটি প্রথায় রূপ নিয়েছে; অর্থাৎ, তারা মনে করেন, এটিই তো হয়ে আসছে, এতে আবার সমস্যার কি হল? তারা বলেই ফেলেন যে, মজুরী নিয়ে কথা বললে তাদের আর কাজ জুটবে না। পুরুষরা শুনে তো রাগ করেই বসেন। তারপর উজ্জীবক এক এক করে বেশ কিছু জিজ্ঞাসা তুলে ধরেন; যেমন, একজন নারী ও একজন পুরুষের কাজের পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু, নারীর মজুরী বৃদ্ধি পেলে তাদের লাভ না ক্ষতি, নারীরা মাঠের কাজে যোগ দেয় পুরুষের আগে না পরে, উত্যাদি। পুরুষ বা নারী কেউই কথাগুলোর কোন সদুত্তর দিতে পােেরন নি। শুরু হয় আত্মজিজ্ঞাসা- নিজের সাথে নিজের বুঝাপড়া।

ম্-ুা নারীরা গণগবেষণা বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেন মালিক পক্ষের সাথে কথা বলার জন্য। ইতোমধ্যে তারা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাথেও পরামর্শ সেরে নেন। মালিক পক্ষ তাদের প্রস্তাবে রাজী হলেন না। ফলে মু-া নারীরা কাজ হারাতে থাকলেন এবং এলাকার অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নারীরা (যেমন ঋষি, নমশূদ্র ও মুসলিম) অধিক পরিমাণে কাজ পেতে লাগলেন। মু-া নারীরা আবারো করণীয় স্থির করতে বৈঠকে বসলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে তারা এলাকার নারী শ্রমিকদের সাথে গোষ্ঠীভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন; তারা বুঝাতে সক্ষম হন যে, একই পরিমাণ কাজ করে নারীরা পুরুষের অর্ধেক মজুরী পাবেন, এটি হতে পারে না। পরে সকলের দেন-দরবারের ফলস্বরূপ নারী শ্রমিকদের মজুরী একশো টাকা থেকে দেড়শো টাকায় উন্নীত হয়।

গত মাসে দশ বছরে মজুরী বৈষম্যের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে কথা হয় রিইব-এর ঐ উজ্জীবকের সাথে। উজ্জীবক শ্রী চৈতন্য কুমার দাস বর্তমানে অন্য একটি প্রকল্পের অধীনে এই এলাকায় কর্মরত আছেন। জানা গেল, এ এলাকায় নারী-পুরুষ মজুরী বৈষম্য আরোও কমে এসেছে ধারাবাহিক আলোচনার ফলে, তবে কাঙ্খিত পর্যায়ে এখনো আসতে পারেনি। বর্তমানে পুরুষের মজুরী পাঁচশো টাকা আর নারীর মজুরী তিনশো থেকে তিনশো পঞ্চাশ টাকা। ধরণী মুন্ডা, সঞ্জুলী মুন্ডা, বিমলা মুন্ডা, সনাতন মুন্ডা, স্বপন মুন্ডা, তুলসী মুন্ডা প্রমুখ ব্যক্তির সাথে কথা বলে একই তথ্য পাওয়া যায়; কাজের মৌসুম না থাকলে মজুরী আরোও কমে যায় বলে তারা জানান। চৈতন্য সমান কাজের সমান মজুরী না হওয়ার কারণ হিসেবে মানসিক বাধাকে মূল বাধা বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ, নারীরা –যে মজুরী পায় তা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট রয়েছেন; তারা মনে করছেন বেশী দাবী-দাওয়া করলে কাজ হারানোর ঝুঁকি থাকে। আর পুরুষরা মনে করেন, মজুরীতে নারীরা তাদের সমান হয়ে গেলে মান-সম্মানে আঘাত পড়বে। অধিকন্তু, স্মরণাতীত কাল থেকে অবহেলিত ও অধিকারবঞ্চিত থেকে থেকে তাদের মনোজগতে চাহিদার বিষয়টি এমন এক সীমারেখায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, যেন কোনভাবে খেয়েদেয়ে দিন কেটে গেলেই হল। কোন কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য কিছু করবে, এ বিশ্বাসটুকুও তাদের নেই, তাই নিজ উদ্যোগে স্থানীয় সরকারের কোন দপ্তরে কোন দাবী নিয়ে তাদের তেমন যোগাযোগও চোখে পড়ে না। তার মতে, অন্য অনেক দিক থেকে তাদের কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হলেও সমষ্টিগত উন্নয়নে তাদের তেমন পরিবর্তন ঘটেনি; এজন্য প্রয়োজন এই জনগোষ্ঠীর সাথে গণগবেষণার মত প্রায়োগিক কর্মসূচী নিয়ে দীর্ঘ পরিসরে কাজ চালিয়ে যাওয়া, যাতে করে তাদের বদ্ধমূল চিন্তাচেতনায় একটু পরিবর্তন আসতে পারে।

সত্যি কথা, মানসিকতা তথা চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন না আসলে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। চিন্তা-চেতনা থেকে উদ্ভূত ইচ্ছা ও কর্মপ্রবণতাই ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করে। অপরদিকে, সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রেরও কিছু দায়-দায়িত্ব এখানে বিজড়িত রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে হলে আর্থিক এই বৈষম্যমূলক প্রথাকে নির্মূল করতে হবে। এক্ষেত্রে উল্লিখিত পরিসংখ্যান (জাতীয় ও স্থানীয়)-এর তথ্যমালা সযত্নে বিবেচনায় আনা আবশ্যক। মুন্ডা নারী ও পুরুষ এবং একইসাথে সকল শ্রমজীবী মানুষ যেন ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত না হয় এবং বিশেষ করে নারীর কর্মস্থলের সামাজিক পরিবেশ যেন কর্ম-অনুকূল হতে পারে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু সুদৃষ্টি কামনা করি।

লেখক: মানবাধিকার কর্মী ও গবেষক

মোস্তফা কামাল যাত্রা

থিয়েটার হলো- সকল শিল্প মাধ্যমের আধার। যার মধ্যে শিল্পের প্রতিটি শৈলীর সংশ্লেষণ ঘটানো যায় বা ঘটানোর সুযোগ থাকে যৌক্তিক কার্যকারণ সমেত।

মানব ইতিহাসের পরিবর্ধণের সমান্তরালে থিয়েটার চর্চিত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে- বহুমাত্রিকতায়। যার সর্বাধুনিক দার্শনিক প্রয়োগ হচ্ছে- থিয়েটারের মাধ্যমে ‘শান্তি (Peace)’ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।

‘থিওরী অব রোল’ ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ উত্তর অশান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষের মনোবিপর্যয় রোধে `সাইকোড্রামা’ অভিধায় এই নাট্য অভিযাত্রার সূচনা করেন মনোবিশ্লেষক গুস্তাফ ফ্রয়েড এর প্রিয় ছাত্র জেকব লিভি মরিনো।

মানসিক প্রশান্তি আনায়নের কৌশল হিসাবে শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যমের একক ও সমন্বিত ব্যাবহারের মধ্য দিয়ে ‘শান্তি (Peace)’ প্রতিষ্ঠায় এই প্রয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই এখানে থেরাপিউটিক থিয়েটার একটি `আম্ব্রেলা’ টার্ম হিসাবে পরিগণিত।

মূলত: মানসিক অবস্থা পূণর্গঠনের জন্য আলোচ্য প্রক্রিয়ায় থিয়েটার এর মনোস্তাত্ত্বিক অনুশীলন হয়ে থাকে। ফলে ‘শান্তি (Peace)’ নিশ্চিতকরণে থিয়েটারের মনোবিশ্লেষক চরিত্র এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে বা প্রাধান্য পায়।

সাইকোড্রামা শিরনামে এই মনোবিশ্লেষক নাট্যধারা বিগত ১ শতাব্দী ধরে নানান পরীক্ষা-নিরিক্ষার পথ পরিক্রমায় বর্তমানে “এক্সপ্রেসিভ আর্টস” হিসাবে বিশ্বব্যাপি অনুশীলিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই ধারার সাইকোএনালিটিক থিয়েটার এর চর্চা আরম্ভ করেছিল স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা “ইউনাইট্ থিয়েটার ফর সোশাল অ্যাক্শন্ (UTSA/উৎস)” নামের প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ইস্যু বা লক্ষ্য জনগোষ্ঠীকেন্দ্রিক ‘থিয়েটার ইউনিট’ পরিচালনার মাধ্যমে এই প্রতিবিধানমূলক নাট্য (থেরাপিউটিক থিয়েটার) প্রক্রিয়ার অনুশীলন সূচিত হয়েছিল।

অর্থাৎ ‘ইউনিট থিয়েটার কনসেপ্ট’ এ বিগত ২ যুগেরও অধিক সময়কাল যাবৎ উৎস (UTSA) এর তত্ত্বাবধানে মনোবিশ্লেষক নাট্যের প্রশান্তি উদ্দিপক নাট্যশৈলী হিাসাবে সাইকোড্রামা, সোসিওড্রামা, লিভিং নিউজপেপার থিয়েটার, প্লেবেক থিয়েটার, ড্রামা থেরাপি, থিয়েটার থেরাপি হিসাবে চর্চিত হচ্ছে।

যাকে ‘আম্ব্রেলা’ টার্ম হিসাবে ‘থেরাপিউটিক থিয়েটার’ অবিধা দেওয়া হয়েছে। যার সর্বাধুনিক অবিধা হলো- ‘এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপি’।

অশান্ত মন ও মননকে প্রশান্ত করে মানুষের সৃজনশীলতা ও সতস্ফুর্ততাকে জাগিয়ে তুলতে এই প্রক্রিয়ায় বিশেষায়িত কর্মকৌশল হিসাবে উক্ত নাট্যবিজ্ঞান অনুশীলিত হয়।

অভিব্যাক্তি প্রকাশের কৌশল হিসাবে বর্নিত ‘থেরাপিউটিক থিয়েটার’ তথা ‘এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপি‘ অধিবেশন (Session) এ অংশগ্রহণকারীদের মনোবিশ্লেষনে প্রযুক্ত নাট্যযজ্ঞ বিবিধ প্রক্রিয়ায় চর্চিত হয়ে থাকে।

মনোবৈকল্য দূর করে মানুষের মধ্যে মানবিকতার উন্মেষ ঘটিয়ে মানবিকরণের সংস্কৃতি হিসাবেও মনোবিশ্লেষক নাট্যক্রিয়া ব্যাবহার হয়ে থাকে। ফলে দ্বন্ধ-সংঘাত কমে আসে। গড়ে ওঠে মানবিক সমাজ।

আর সমাজের নিয়ামক শক্তি হিসাবে মানুষের ব্যাক্তিক ও সামাজিক ইতিবাচক মনোস্তত্ত্ব গড়ে তুলতেও এই নাট্যক্রিয়া রাখে গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

প্রকৃতপক্ষে এই প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় থিয়েটার এর মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচ্য মনোবিশ্লেষক নাট্যবিজ্ঞান তথা নাট্যক্রিয়ার বহুমাত্রিক প্রয়োগ হয়ে থাকে। যাকে আমি ‘থিয়েটার ফর পিস’ তথা “Theatre for Peace(TfP)” হিসাবে অভিহিত করছি।

উক্ত মনোবিশ্লেষক ও নিরাময়ী নাট্যক্রিয়ার অনুশীলক সংস্থা উৎস (UTSA) এর সর্বশেষ কৌশলগত কর্মপরিকল্পণা(Strategic Plan) তে তাই “ Theatre for Peace(TfP)” কে শ্লোগান হিসাবে ব্যাবহারকরা হয়েছে।

আসন্ন কর্ম বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠান হিসাবে উৎস (UTSA) এই শ্লোগান বা প্রতিপাদ্যকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যেতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

উৎস (UTSA) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কেবল মাত্র বর্ণিত প্রয়োগ প্রক্রিয়া অনুশীলনের মাধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা; পাশাপাশি এই ধারার মনোস্তাত্ত্বিক নাট্য বিজ্ঞানের বিদ্যায়তনিকপাঠ সম্পন্ন করতে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মনোবিশ্লেষক নাট্যবিজ্ঞানীদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করে চলেছে- ‘ন্যাশনাল থেরাপিউটিক থিয়েটার ওয়ার্কশপ (NTTW)’।

NTTW শিরনামে বিগত ২ দশকে আয়োজিতউল্লেখিত কর্মশালাগুলোতে মনো-নাট্যের বিভিন্ন নিরাময়ী নাট্যশৈলীর উপর হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মনোবিজ্ঞান, নাট্যকলা, চিত্রকলা ও সংগীত বিভাগে কর্মরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ সেইসব কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিষয়টির বিদ্যায়তনিক পাঠের গুরুত্ব অনুধাবন করে বেশকিছু সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের বিদ্যায়তনিক পাঠ্যক্রমগুলোতে বিভিন্ন শিরনামে কোর্স হিসাবে পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ক্লিনিক্যাল সাইকোলজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; নাট্যকলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; থিয়েটার এন্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

এছাড়া গত বছর থেকে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (CBIU) আরম্ভ করেছে একটি ত্রৈমাসিক সার্টিফিকেট কোর্স। তবে এই বিশেষায়িত কোর্সটির টাইটেল করা হয়েছে “এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপি”।

কেন কি কারণে “এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপি” তা জানার জন্য কোর্স সংক্রান্ত FB পেইজে (Center Expressive Psychotherapy in Bangladesh) অনুসন্ধান করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ রইলো। যেখানে থেরাপিউটিক থিয়েটর একটি বড় পাঠ্য কম্পোনেন্ট। মনোবিশ্লেষণমূলক নাট্যক্রিয়ার বিভিন্ন প্রয়োগ প্রক্রিয়া এই কোর্সের আওতায় পঠিত হয়ে থাকে।

করোনার মতো মহামারী তথা দূর্যোগের পর মানুষের মধ্যে সৃষ্ট মনোসংকট উত্তরণে
থিয়েটার এর এই মানবিক ও প্রতিবিধানমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন একাডেমিকভাবে প্রশিক্ষিত 'থিয়েটার প্যাথলোজিষ্ট' ও 'থিয়েটার থেরাপিষ্ট'। তাই এই
ধারার নাট্যযজ্ঞের বিদ্যায়তনিক পাঠ সময়ের চাহিদা তথা কালীক প্রয়োজন।


সর্বপরি সৃজনশীল কলা বিদ্যার শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে এই ধারার নাট্য প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তুলতে ‘থিয়েটার ফর পিস (TfP)’ এর বিদ্যায়তনিক পাঠ ও পাঠ্যক্রম থাকাটা অত্যাবশ্যক।

যাতে করে ‘থিয়েটার ফর পিস (TfP)’ এর পদ্ধতিগত অনুশীলন ও প্রয়োগে প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

মোদ্দাকথা মনোবিজ্ঞানসহ শিল্প-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট সকল বিদ্যায়তনিক শিক্ষাক্রমে
“থিয়েটার ফর পিস (TfP)” কে পাঠ্যক্রমভূক্ত করা জরুরী।

এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পঠিত সৃজনশীল কলা বিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদ, মনোবিদ ও নীতি নির্ধারকদের মনযোগ আকর্ষণ করছি। যাতে করে আমার প্রাসঙ্গীক ভাবনাটি একটি যৌক্তিক পরিণতি পায়।

লেখক: মোস্তফা কামাল যাত্রা, অতিথি শিক্ষক, নাট্যকলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; এবং নির্বাহী পরিচালক: ইউনাইট্ থিয়েটার ফর সোশাল অ্যাকশন (UTSA)

লুৎফর রহমান

সরকার বদল হয়েছে। একসময় আন্দোলনই করা যেতো না, আর এখন আন্দোলনের হিড়িক পড়েছে। শিক্ষার্থীরা সচিবালয় ঘেরাও করে পরীক্ষা বাতিল করিয়েছে। হাতুড়ে ডাক্তাররা নেমেছে তাদেরও সার্টিফিকেট দিতে হবে। আনসারদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। মনে হচ্ছে হঠাৎ করে ঢাকা শহর যেনো আন্দোলনের শহর হয়ে গেছে। তবে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার এতোদিন যারা যুক্তি দিয়ে কথা বলেছে তারা একটা ভিত্তি রচনা করতে পারলেও পনেরো বছরের আওয়ামী দুঃশাসনকে হটাতে পারেনি, হটিয়েছে সেইসব ছাত্র-তরুণরা যারা আবেগ ও সাহস দেখাতে পেরেছে। বর্তমান সরকার চার সপ্তাহ অতিক্রম করলেও তার স্থিতাবস্থা হয়নি। সে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো আয়ত্তে আনতে পারেনি বাস্তব কারণে। এরপর আছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত সংকট। এর মধ্যে যারা চর দখলের সুযোগ নিচ্ছেন তারা হয়তো ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন। যে সরকার গণতন্ত্রায়নের জন্য নানাবিধ সংস্কারের অঙ্গীকার করেছে তার জন্য স্থিতাবস্থা আবশ্যক।

অস্থিতিশীলতা পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে যায়, যা দেশের মানুষ মোটেই কামনা করে না। মানুষ বোঝে এই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীরা কারা এবং তাদের গন্তব্য কোথায়? বর্তমান সরকারের সক্ষমতা ও মেয়াদকাল প্রশ্নে দেখতে হবে সরকারটির অবয়ব ও কর্মদক্ষতার বিষয়টি। তারপর আসে মেয়াদকালের বিষয়টি। সরকারে অনেক স্বনামখ্যাত এনজিও মুখ দেখা যাচ্ছে। মানুষ তাদের প্রতি তখনই খুশি হবে যখন দেখবে তারা কামিয়াব হয়েছেন। কেতাবি মানুষ আর বাস্তবতার মাঝে ফারাক থাকে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে তারা সফল হোন এটাই মানুষের দাবি।

প্রধান উপদেষ্টা মানুষকে আহ্বান করেছেন ধৈর্য ধরতে। সে বিষয়টি যেমন গুরুত্বের সাথে নিতে হবে, তেমনি একটি রোডম্যাপ অনুসারে কাজটিও শুরু করতে হবে। সরকারকে একটা জবাবদিহির ভেতর দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। তাদের মানুষের পক্ষে থেকে বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, প্রশাসন, আমলাতন্ত্র প্রভৃতি সাজাতে হবে নতুন করে এবং অর্থনীতিকে সচল করতে হবে। এখানে রাজনীতির লোক না থাকলেও কাজটা রাজনীতিরই। তারা নির্বাচিত নন, তো ছাত্রজনতার মেন্ডেটপ্রাপ্ত সরকার। তাদের জবাবদিহি তাই জনগণের কাছে। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের তা ছিলো না। এখানেই এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য। বর্তমান সরকার জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করবে, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর নয়। জনগণকে বলা হচ্ছে ধৈর্য ধর, আর জনতার বক্তব্য হচ্ছে যেনো এই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে না যায়! এখানে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত ও দলগত সুযোগ নেয়ারও চেষ্টা আছে। সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি থেকে উদ্বেগও আছে। আসলে সম্প্রদায়ের লোকেরা আশাবাদী থাকলেও কোনো অর্জন দেখছে না। প্রত্যাশার সাথে মিলিয়ে কোনোকিছুকে সাজানো যাচ্ছে না। কারণ সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকারকে প্রথমটায় সুস্থির হতে হবে এবং সাথে সাথে একটা কাজের পরিকল্পনা পেশ করে এগুতে হবে। এক্ষেত্রে তারা ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাজনীতিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন।

সরকারকে সব পরিবেশে গণতান্ত্রিক মানসিকতা দেখাতে হবে। তাদের সংবেদনশীল হতে হবে। দেশে অর্থনৈতিক সংকট প্রচণ্ড। সালমান এফ রহমান বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এস আলম গ্রুপ ইসলামি ব্যাংক থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এটা শুধু ব্যাংক লুটপাট নয়, হয়ে গেছে ব্যাংক ব্যবস্থা লুটপাট, যা সচরাচর কোথাও ঘটে না। বাংলাদেশে ব্যাংকিং সিস্টেমটাকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের কাঠামোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরা এ কাজ নিজেদের মালিকানায় থাকা ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকগুলোতে করেছে। ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। তারপর টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও নিয়েছে। এটা হয়েছে একটা দুষ্ট চক্রাকারে যেমন- প্রাইভেট ব্যাংক থেকে সরকারি ব্যাংক এবং শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।

জনগণের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে এই টাকা উদ্ধার হোক। টাকা আসলে অলৌকিক বিষয়, কাগজের নোট। এর পৃষ্ঠে বাস্তব সম্পদ পাওয়া গেলে উদ্ধারে কাজে লাগবে। তবে সেটা কমই পাওয়া যাবে বলে মনে হয়। আর টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেলে বিষয়টা আরো জটিল হয়ে যায়। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিগত সময়ে বিদেশে পাচারকৃত টাকা উদ্ধার হয়েছিলো কম করে হলেও। এক্ষেত্রে ব্যাংক বিষয়ে ব্যাপক সংস্কার আনতে হবে। বর্তমান সরকার সে কাজ করবেন। এ ব্যাপারে একটি শ্বেতপত্র আবশ্যক যা সরকারকে সাহায্য করবে। সব মানুষের দাবি এসব অপরাধীকে ধরে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। না হয় শহিদদের আত্মদান বিফলে যাবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে চালু করতে হলে পুঁজি সরবরাহ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন আর টাকা ছাপাবেন না। এতে মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়বে। তাহলে নতুন শেয়ার ছেড়ে পুঁজি গঠন করতে হবে। তার আগে মালিকানা ঠিক করা বড় ব্যাপার। এসব ব্যাংকের মালিকদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছে, অনেকে দুর্নীতির দায়ে বা ঋণখেলাপির কারণে মামলায় পড়েছে, অনেকেই হয়তো খুনের আসামি পড়বে। এখন ব্যাংকগুলোর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিষদ ঠিক করতে হবে। এখানে কাদের বসানো হবে এটাও একটা বিষয়। অনেকের ধারণা এতে কি সুফল আসবে? কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বিকল্প কোনো পথ নেই। এক্ষেত্রে একটা কমিশন গঠন করা যেতে পারে যারা ব্যবস্থাপকদের মনোনয়ন দেবে জাতীয় স্বার্থে। সরকারকে এখানে টানা যাবে না। তাহলে যারা সরকারে থাকবেন তাদেরই প্রভাব পড়বে ব্যবস্থাপকদের ওপর। এতে দলীয়করণ থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না। কাজগুলো খুবই কঠিন, তারপরও করতে হবে। শেখ হাসিনা সরকার ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। অভিজ্ঞতা বলে জবাবদিহির বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের সব ধ্বংসকৃত প্রতিষ্ঠান যেমন- দুদক, নির্বাচন কমিশন, এনবিআর প্রভৃতিকে ঢেলে সাজাতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিরপেক্ষভাবে হতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে নিয়োগকৃতরা যাতে কারো প্রভাব বলয়ে না থাকে। কাজটা করবে একটা কমিশন। এ মর্মে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলোচনা হতে পারে। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও প্রয়োজনীয় ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের নতুন এক গণমুখী রাষ্ট্রকাঠামোর মাঝে যেতে হবে। আমাদের সামনে দুটো কর্তব্য। একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা আর অন্যটি হচ্ছে একটি আধুনিক সংবিধান নিশ্চিত করা। সংবিধান প্রণয়নের সময় মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত মূলনীতি, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র থেকে কোনোক্রমেই সরে আসা যাবে না। সংবিধানে এমন সব ধারা সংযোজন করতে হবে যাতে আর কর্তৃত্ববাদী শাসন জন্ম নিতে না পারে এবং গণতন্ত্র অব্যাহত থাকে। এতে মানুষের সব আশা পূরণ হওয়ার পথ খুলবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে জাতিকে এ ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছানো। সংবিধানটি প্রণয়ন করবেন অবশ্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সেজন্য প্রয়োজনীয় সময় নতুন সরকারকে দিতে হবে। তার মেয়াদকাল নিশ্চয় অধিক সময় হবে না।

হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক সরকার বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ে আঠারো লাখ ছত্রিশ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা রেখে গেছে। আজকে এর সমাধান আমাদেরই করতে হবে। তবে চোরদের ফৌজদারি আইনে শাস্তি দিতে হবে। তা নাহলে শহীদদের সঠিক মর্যাদা দেয়া হবে না। শাস্তি পেলে পরবর্তী অপরাধীরা অপরাধ করার সময় ভাববে। রাজনীতির সুযোগ নিয়ে যারা অর্থনীতিকে তছনছ করেছে তাদের শাস্তি প্রাপ্য হয়ে গেছে। এছাড়া সম্পদ উদ্ধারে আইনসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ব্যাংকিং চালু করতে হবে। এটা বর্তমান সময়ের ব্যাংকিং। এছাড়া বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে জ্বালানি খাতের ওপর। স্বৈরাচারী শাসন আর্থিক খাতের সাথে জ্বালানি খাতকেও নষ্ট করে গেছে। আবার এ দুটো খাত একে অপরকে নষ্ট করেছে।

ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে লুটপাট হয়েছে। ফার্নেস ওয়েলের জায়গায় তারা কম দামের গ্যাস পেয়েছিলো এমন খবরও বের হচ্ছে। সবকিছু তলিয়ে দেখতে হবে। এ দুই খাতের ঘাটতি মেটানোর জন্য তদানিন্তন সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ খাতেও টান মেরেছে। অর্থাৎ সব তছনছ হয়েছে। দুর্নীতির এই দুষ্টচক্র আবার কর ফাঁকি দিয়েছে। এরা জাতির চিহ্নিত দুষমন। এই অলিগাররা অর্থনীতির সব শাখাকে চুষে ছোবড়া করে দেয়।

একসময় রাজনীতিবিদরা অনুভব করেন তারা দেশ চালান না- চালায় অলিগাররা। আমাদের এবার দ্রুত এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই কাজটির দায়িত্ব পড়েছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। তারা দ্রুত স্থিতাবস্থায় ফেরাবেন দেশকে। রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ মানুষ তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত। এবার তারা রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করবেন। শুরু করলেই শেষ হবে এবং দ্রুত শেষ হবে, আমরা বহুদিন পর ভোট প্রয়োগ করে একটি নির্বাচিত সরকারের মুখ দেখতে পারবো।

লেখক: কলামিস্ট

সূত্র: সাপ্তাহিক একতা

আলী রেজা

গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে সারা দেশে যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে তা শুধু বিজয়ের আনন্দ বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে অনৈতিক ও অরুচিকর কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতে দেখা গেছে। বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে হাসিনা সরকারের এ পতনকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলেও প্রচার করেছেন। একটি দেশের সরকারপতনকে সে দেশের স্বাধীনতা বলাটা কোনো বিবেচনায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। নব্বইয়ে সর্বদলীয় গণআন্দোলনে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল। তাই বলে সেটাকে ভুলেও কেউ স্বাধীনতা বলেনি। একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব একরারই অর্জিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাও অর্জিত হয়েছিল একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।

৫ই আগস্ট একটি দলীয় সরকারের পতন হয়েছে, যে দলটি বারবার সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতায় থেকে দলটিকে একটি বেপরোয়া, স্বেচ্ছাচারী, দুর্বৃত্ত ও জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত করা হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি ধারাবাহিক নিপীড়ন ও প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে অপরাজনীতি সেটিও সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখেনি। ফলে সাধারণ ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে সংগঠিত ছাত্রআন্দোলন এক পর্যায়ে গণআন্দোলনে রূপ পেয়েছে।

একটি সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠলে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সে সরকারের পতন কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। অনেক দেশেই এ ধরনের গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন হতে দেখা যায়। জুলাই-আগস্টের এ গণআন্দোলনকে অনেকে গণবিপ্লব বলে আখ্যায়িত করতে চান। কিন্তু বিপ্লবের নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্য আলাদা। বিপ্লবের মাধ্যমে একটি সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থার যে মৌলিক পরিবর্তন হয় তার সঙ্গে এ আন্দোলনের তুলনা করা চলে না।

৫ই আগস্টের পর দেশে কোনো বিপ্লবী দল বা সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেনি। খুবই স্বাভাবিকভাবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। অন্তর্বতী সরকারে যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যাহোক, সরকার পতনের পর আন্দোলনকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের এজেন্ডা দিয়েছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি আশানুরূপ সংস্কার করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তাহলেই জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। তা না হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হতে সময় লাগবে না।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের দাবি উঠেছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় যেখানে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ আছে সেখানে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সাম্য ও মানবিক মর্যাদার একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের বক্তব্য-বিবৃতি থেকে জানা যাচ্ছে যে- তারাও বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার করতে চান। দিনবদলের প্রেক্ষিতে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করতে চান। কিন্তু এটা করতে হলে সর্বাগ্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেকে বদলাতে হবে। প্রতিহিংসা কিংবা প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি আর দেখতে চায় না বাংলাদেশ। সরকার পতনের পর প্রতিহিংসামূলক আচরণ প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার প্রেক্ষিতে সারা দেশে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। সরকার পতনের পর যে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে; তার কোনো প্রয়োজন ছিল না। বিএনপি, জামায়াত ও সমন্বয়কারীদের নিষেধ সত্ত্বেও এসব ঘটেছে। পতিত সরকারের বিরুদ্ধে নানা বক্তৃতা-বিবৃতির ফলে দুষ্কৃতকারীরা অতি উৎসাহী হয়ে এসব করেছে। এতে পতিত সরকারের কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে দেশের ও দেশের মানুষের। কর্তৃপক্ষ আরো দায়িত্বশীল হলে প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড এত লাগামহীনভাবে চলতে পারতো না। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের দাবি অনুযায়ী যদি বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিদ্যমান অসংগতিগুলো বদলে ফেলতে হয় তাহলে বদলা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকেও বের হয়ে আসতে হবে।

বদলা নেওয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশকে একটি আদর্শহীন জায়গায় নিয়ে গেছে। বদলা নিতে গিয়ে প্রতিটি পরবর্তী সরকার পূর্ববর্তী সরকারের অপকর্ম অনুসরণ করেছে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। সংসদীয় সরকার তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার হলেও নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিরা ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। লুটপাটের এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে চলে আসলেও একানব্বই পরবর্তী সময়ে তা নতুন মাত্রা লাভ করে।

দুর্নীতির দুর্বৃত্তায়ন ঘটতে থাকে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত। সরকার পরিবর্তনের ফলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার আরো বেড়ে চলে। পূর্ববর্তী সরকারের অপকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশ করে তলে তলে নিজেরা আরো বেশি অপকর্ম করতে থাকে। এভাবে প্রতিটি সরকার দুর্নীতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সর্বশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের একটানা দেড় দশকের শাসনামলে দেখা গেল দুর্নীতি ও অর্থপাচারের এক ভয়াবহ চিত্র। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শেয়ার বাজারসহ একে একে প্রতিটি খাতের লাগামহীন দুর্নীতির খবর প্রকাশ হওয়া শুরু হলো। ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে ছাড়লো সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট এক শ্রেণির শিল্পপতিরা।

এখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মিাণ করতে হলে একদিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সকল দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, অন্যদিকে নিজেদেরকেও দুর্নীতিমুক্ত থাকতে হবে। মানুষের মনে একটি আশঙ্কা এখন বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাও নিজেদের আখের গোছাবে। মানুষের মনের এই বদ্ধমূল ধারণা ভেঙে দেওয়াটা খুবই জরুরি। এজন্য ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসার প্রত্যাশা করেন তাদেরকে বদলে যেতে হবে। বদলা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। এ পরিবর্তন বা রদবদল যেন ভালো কিছু বয়ে আনে। এ বদল যেন বদলা নেওয়ার মানসিকতা থেকে না হয়। কোনো পক্ষের হুজুগে দাবির প্রেক্ষিতে সুযোগ্য ও নিরপেক্ষ কাউকে সরিয়ে দেওয়াটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জন্য কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা যেভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন সে বিভক্তি দূর করা জরুরি। দীর্ঘদিন যাবৎ এদেশের নতুন প্রজন্ম যে জিনিসটি দেখে এসেছে তাহলো বুদ্ধিজীবী ও সমাজচিন্তকগণের মধ্যে একটি অংশ ইনিয়ে-বিনিয়ে সরকারের সকল কর্মকাণ্ডের মধ্যে শুধু ভালো কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। একচোখা এ বুদ্ধিজীবীগণ নির্বিচারে সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন। সরকারকে সমর্থনের পুরস্কারস্বরূপ অনেকেই কাঙ্ক্ষিত পদ-পদবি পেয়েছেন। নিজের যোগ্যতাবলে অনেকে যে পদ-পদবি পাননি তাঁর প্রমাণ মেলে গণপদত্যাগের অবস্থা দেখে। দলীয়করণ কোন পর্যায়ে গেলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রশাসনের সবাইকে নিয়ে একযোগে পদত্যাগ করতে পারেন? এই দলীয়করণের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা বড়োই কঠিন। শেখ হাসিনার আমলে বঞ্চিতদের ঢালাওভাবে পুনর্বাসন করার মধ্যেও ঝুঁকি আছে। এটা করা হলে তারাও তাদের মতাদর্শভুক্তদের নিয়ে আর একটি নতুন ক্ষমতাবলয় সৃষ্টি করবে। শুধু পুনর্বাসন নয়, প্রতিহত করার ক্ষেত্রেও নির্বিচারী হওয়া ঠিক নয়। এমনভাবে বদলা নেওয়া বা দমন করা উচিত হবে না, যাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এক ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে আর এক ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন অর্থহীন হয়ে যাবে।

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। এ সরকার এক সময় জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিবে। তাই ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন থেকে জনবান্ধব হয়ে উঠতে হবে। পতিত সরকারের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ইতিবাচক নয়। একানব্বই পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘুরেফিরে ক্ষমতায় থেকেছে। দু’দলই দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে। নির্লজ্জ দলীয়করণ করেছে। সাধারণ মানুষ এদের কাউকেই পছন্দ করে না। কিন্তু উপযুক্ত বিকল্প না থাকার কারণে এরাই ঘুরেফিরে ক্ষমতায় এসেছে। ভবিষ্যতেও তাই হবে। আন্দোলনকারীদের চাপে কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে যাঁরা পদত্যাগ করছেন কিংবা অপসারিত হচ্ছেন তারা সবাই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। একটি বড়ো অংশের ক্ষেত্রে একথা সত্য হলেও তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ থাকতে পারেন। এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আবার এসব পদে যাঁদেরকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বা হবে তাঁরাও যেন সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ হন সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। দলীয় বিবেচনায় একজনকে অপসারণ করে সেই একই দলীয় বিবেচনায় আর একজনকে নিয়োগ দেওয়া হলে ‘যেই লাউ সেই কদু’ দশা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কারের মহান চিন্তার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। যারা মনে করেন, এতদিন বঞ্চিত ছিলাম, এখন সবকিছু দখল করবো- তাদের দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। যারা মনে করেন, এতদিন নিপীড়ন-নির্যাতন ভোগ করেছি, এখন সবকিছুর বদলা নেব- তাদের দ্বারা রাষ্ট্রব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়। যারা বদলা নেওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করে জনপ্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে নিজেকেই বদলে নিতে পারবে- ভবিষ্যতের বাংলাদেশ তাদের কাছেই নিরাপদ থাকবে।

আলী রেজা: কলাম লেখক, কলেজ শিক্ষক ও পিএইচডি গবেষক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আকমল হোসেন

জ্ঞানের আধার মানুষের নাগরিক অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে কম-বেশি হওয়ার চিত্রই বৈষম্যের ধারণা দেয়। একই প্রকৃতি বা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট জীবের জন্য এটা হওয়ার কথা নয়, এটি বলছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, এটি ঠিক করেছে পৃথিবীর মানুষ আবার এই মানুষকেই, অধিকার বঞ্চিত করে বৈষম্য তৈরি করছে, ব্যক্তি সমাজ ও রাজনীতি এর পেছনে কাজ করেছে।
 
একই মানুষের কত রূপ? অথচ এটা হওয়ার কথা নয়। একজন মানুষ অপ্রকৃতিস্থ, দেউলিয়া (দায় পরিশোধে অক্ষম/ এবং আদালত কর্তৃক প্রমাণিত) হলেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার প্রয়োগ, সাাক্ষ্য প্রদান ও জনপ্রতিনিধি হওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন না। কিন্তু খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার থেকে কেউ তাকে বঞ্চিত করতে পারবে না। অথচ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে একজন সাধারণ নাগরিক এগুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সময়ের শাসক ও রাষ্ট্রযন্ত্রই এই বৈষম্য করেছে। প্রতিকার চেয়েও অনেকেই তা পাননি, ফলে শুধু সরকারের ওপরই নয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মেছে। যদিও নাগরিক বৈষম্য হ্রাস মানুষের সুষম বিকাশে রাষ্ট্রের সংবিধানে অনেক ইতিবাচক বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। ১৯৩৫ সালের ভারতীয় শাসন আইন, ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানের শাসন আইন (সংবিধান), ১৯৭২ সালের প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানে বৈষম্য লাঘবের কথা রয়েছে।
 
সংবিধানে নাগরিকের এই সুবিধার অন্তর্ভুক্তি এমনি এমনি হয়নি, আন্দোলন, গ্রেফতার, জেল-জুলুম, হুলিয়া এবং জীবনহানির ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এটাই যে, কেউই কথা রাখেনি, ফলে স¦াধীনতার পর সকল শাসককেই নাজেহাল হয়েই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, এই সকল জনস্বার্থবিরোধী শাসকদের রক্ষা করেছে দেশের আইন প্রণেতারা, শাসন ও বিচার বিভাগের লোকেরা, এরা শাসকের স্বার্থ যতোটা রক্ষা করেছে সে তুলনায় জনগণের স্বার্থ দেখেনি। ধনবৈষম্যের দিক থেকে পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার আর আজ বাংলাদেশে বাইশ পরিবার তৈরি হয়েছে, বর্তমানে আয়বৈষম্য ১ঃ৮৪।
 
রাষ্ট্র ও জনগণের টাকা নানাভাবে আত্মসাতের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে সেকেন্ড হোম তৈরি করা হয়েছে, দ্বি-নাগরিকত্ব আইন লুটেরা রাজনীতিক, অসাধু ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি আমলারা কাজে লাগিয়েছে। এটি বন্ধ করার দায়িত্ব যাদের ছিলো তারা সেটা না করে নিজেরাই এসকল অপরাধের সাথে যুক্ত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী সরকার সামরিক সরকার এং অন্তর্বর্তী সরকার, এদের কাজে-কর্মে কম-বেশি স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিবাদী আচরণের প্রতিফলন ঘটেছিলো, যার বিরূপ ফল ভোগ করেছে সাধারণ মানুষ, যেটা ঐ সরকারের পতনের পর মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণ দেখেছেন। সব সময় একই চিত্র দেখা গেছে, এ চক্রে লুটেরা ব্যবসায়ী, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, মাস্তান ও মিডিয়ার কিছু মানুষ।
 
দল রাজনীতি ও দেশ পরিচালিত হচ্ছে মানি-মাসেল-মিডিয়া এবং ক্রাশ, ক্রাইম, করাপশনকে নির্ভর করে। অস্ত্রধারী বাহিনী রাষ্ট্রের কর্মচারীরা সেখানে সরকারে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার হন, পুরস্কার হিসেবে কামিয়ে নেন অঢেল ধন-সম্পদ। বিজ্ঞান নতুন প্রযুক্তি মানুষের দক্ষতাবৃদ্ধি করায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, হয়েছে প্রবৃদ্ধি, তবে বণ্টনটা সুষম না হওয়ায় বৈষম্য বেড়েছে। পুঁজিবাদী/ভোগবাদী বা চুইয়ে পড়া অর্থনীতির ছিটেফোঁটা অর্থনৈতিক সুবিধা কারো কারো পকেটে ঢুকেছে। তবে ফকিরের আয় যেমন বিনিয়োগ হয় না, তেমনি প্রবৃদ্ধিনির্ভর উন্নয়নকেও উন্নয়ন বলা যায় না।
 
অবকাঠামোগত উন্নয়ন (রাস্তা-ঘাট, সেতু-কালভার্ট, ভবন) অনেক দেশের তুলনায় বেশি হলেও মনোজগতের উন্নয়ন তেমন হয়নি। আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর লুটপাট আর টাকা পাচার আর শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর গণভবনের লুটপাটের ঘটনাই সেই কথার সত্যতা প্রমাণ করে। জাতীয় চরিত্র ও রুচিবোধের যে প্রচণ্ড আকাল এখনও আছে। ঝড়-খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত সাধারণ মানুষকে ত্রাণ দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য আর্থিক সংকট মোচন করা সম্ভব হলেও মনোজগতের এই আকাল কীভাবে দূর করা যায়? বিষয়টি নিয়ে ভাববার প্রয়োজন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়ের পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বা শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা এবং এখনও এই জঘন্য কাজের বিচার না হওয়ায় মনোজগতের আকালীদের সংখ্যা বৃদ্ধির যে, ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, তাতে মুরুব্বিদের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হবে, সরকার এ নৈরাজ্যের লাগাম এখনই টেনে না ধরলে সংকট বাড়তে পারে।
 
১৯৪২ সালের সর্বজনীন মানবাধিকারের ৩০টি ধারা, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশের নাগরিকদের সুবিধা আর পুঁজিবাদীদের মধ্যে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের নাগরিক সুবিধার বিষয়গুলো তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের মানুষকে আশাবাদী করেছিলো। ভারতের সংবিধান যতোটা নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করেছিলো সেই তুলনায় পাকিস্তানের সংবিধান করেনি, সাম্প্রদায়িক সংবিধান মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়ার পরিবর্তে ধর্মের অজুহাত দেখিয়ে নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন ও বৈষম্য তৈরি করেছিলো, যার কারণে ৮০ ভাগ মুসলমানের দেশেও ইসলামী সংবিধানকেও অকার্যকর এবং তাদের নির্বাচনে পরাজিত হতে হয়েছিলো। কিন্তু পাকিস্তানী স্বৈরাচার ও তাদের এদেশীয় দালাল রাজাকার, আলবদর, আল শামস এবং চীন-আমেরিকার স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তকে ৯ মাসের যুদ্ধে, ৩০ লক্ষ মানুষের জীবনদান এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলো।
 
পাকিস্তান স্বৈরশাসকদের অগণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিবাদ করায় পাকিস্তানের কারাগারগুলি বামপন্থি আর জাতীয়তাবাদী কর্মীদের দিয়ে ভরা হয়েছিলো। বামপন্থিদের ১৯৪৭ সাল থেকেই রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো, ১৯৫০ সালে রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি করে ৭ জন বামপন্থি কর্মীকে হত্যা এবং ৩২ জনকে গুলিবিদ্ধ করা হয়েছিলো। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার আন্দোলনে গুলি করে ছাত্র হত্যা করেছিলো, ১৯৫৪ সালে নির্বাচিত যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বাদিল করে কেন্দ্রের শাসন জারি, ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো, ১৯৬৬ সালে ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন দমনে পুলিশি অ্যাকশন এবং বঙ্গবন্ধুসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা জারি করে জেলে পুরেছিলো পাকিস্তানী শাসকেরা। যে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো তারাই ক্ষমতায় সে পাকিস্তানী স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করলো। ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ’- সেটিই যেন সত্য হলো।
 
২৪ বছরের পাকিস্তানী স্বৈরশাসকের পতন ঘটানোর পর স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়েছিলো বাংলাদেশের সংবিধান। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে সংবিধানে যুক্ত হয়েছিলো অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। সংবিধানের ১৯(১) ধারায় সুযোগের সমতা, ১৯(২) ধারায় মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ, নাগরিকদের জন্য সম্পদের সুষম বণ্টন করা, ২৯ ধারায় নাগরিকের জন্য সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা থাকবে, ৩৯ ধারায় নাগরিকের জন্য চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ৪১ ধারায় ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ৩২(২) ধারায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ২৯(ক) ধারায় নাগরিকদের যেকোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূল বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না। ৫৩ বছরে বিভিন্ন সময়ে সরকার পরিবর্তন হয়ে নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত সরকার এসেছে, ১৬ বার সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্ত উপরোক্ত বিষয়গুলি এখনও সংবিধানে রয়েছে, কিন্তু কেউই সেটা কার্যকর করেনি। এই পরিবর্তন যতোটা না জনস্বার্থে তার চেয়ে বেশি হয়েছে শাসকের স্বার্থে। সংবিধান পালন করা নাগরিকের জন্য যেমন দায়িত্ব তেমনি সরকারেরও দায়িত্ব, কিন্তু সরকার সেটা করেনি। তাইতো বারবার ছাত্র-জনতাকে বৈষম্য বিলোপ, নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নে আন্দোলন করতে হয় আর তাদের টাকায় কেনা গুলিতে আত্মহুুতি দিতে হয় ছাত্র-জনতাকেই।
 
জনরোষে সরকারের পতন হয়, আসে নতুন সরকার, তাতে নতুনত্ব বেশি থাকে না, অনেকটা নতুন বোতলে পুরোনো মদ ঢালার মতো। চলে ধরপাকড়, কেউ যায় জেলে, কেউ হুলিয়া মাথায় নিয়ে দেশ-বিদেশে পালিয়ে থাকে, দু-চারজনের হয় ফাঁসি, সাধারণ মানুষ থাকে আতঙ্কে। কয়দিন পরে আবার সব আগের মতোই চলে। লুটেরাদের লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার, সরকারি দলের ক্যাডারদের খাল-বিল-নদী দখল, ছাত্রাবাস আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন দখল। ‘আদু ভাই’ ছাত্রনেতাদের ছাত্রত্ব শেষ হয় না, মেধাবী শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে সিট না পেলেও ফেল করা আদু ভাই ছাত্রনেতারা বহাল তবিয়তে ছাত্রাবাসে অবস্থান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দলকানা প্রশাসন তাদের সমীহ করে চলে। আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া চাপা পড়ে যায়। নতুন শাসক আগের শাসকের পথ অনুসরণ করে।
 
সাধারণ জনতা ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলায় পতিত হয়। এ দৃশ্য দেখে অনেকেই বলেন- ‘নৌকা, লাঙ্গল, পাল্লা, শীষ সব সাপের একই বিষ’। তাহলে বিকল্প কী এবং কারা? তাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক মেনুফেস্টো কী? সেটা দৃশ্যমান না হলে আন্দেলনকারী ছাত্র-জনতা পূর্বের মতো আবারও দিকভ্রষ্ট হবে, মানুষ জিম্মি হবে রাজনৈতিক ক্যাডার বাহিনীর কাছে, বাড়বে পাতি নেতাদের খবরদারি, মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোনো পাতি নেতারাই এমএ পাস শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হওয়ার আবদার করবে। নীতির পরিবর্তন ছাড়া ব্যক্তি বা শাসকের পরিবর্তন দেশের গুণগত পরিবর্তনের নিশ্চয়তা দেয় না। একই সঙ্গে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, যেমনটি অতীতেও ঘটেছে। দেশ ও জাতি গঠনের আরেকটি সুযোগ এসেছে, দায়িত্বশীলদের এ সুযোগ হারানো ঠিক হবে না।
 
লেখক : কলেজ অধ্যক্ষ, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত), বাকবিশিস
 

সুত্র: সাপ্তাহিক একতা

চারুউত্তম বড়ুয়া

বিজয় উৎসবে ভাসছে দেশ। এ বিজয় উৎসব কোনো বহিঃশত্রুর দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার বা স্বাধীনতা পাওয়ার উৎসব নয়। এটি সর্বগ্রাসী ঘুস-দুর্নীতি-দুরাচার, বৈষম্য-নৈরাজ্য-দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হবার এবং নিজের ভোট নিজে দিতে পারার তীব্র আকাঙ্ক্ষার বিজয়। এটি দীর্ঘসময় একপাক্ষিক ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে গণতান্ত্রিক শাসনে ফেরার স্বাধীনতার আনন্দ-উৎসব।

প্রশ্ন জাগতেই পারে- আমরা কি তাহলে পরাধীন ছিলাম? আমাদের অপরাপর রাজনৈতিক দল এবং তাদের রাজনীতি কি নিষিদ্ধ ছিল? দেশের উন্নয়ন কি থেমে ছিল? না, কোনোটিই নয়। সাধারণ অর্থে আমরা পরাধীন ছিলাম না। তাহলে কেন ছাত্র-জনতার এই বিক্ষোভ? পরিবর্তনের জন্য এই প্রাণবাজি?

বিগত প্রায় ১৭ বছরে বাঙালি কাগজে-কলমে স্বাধীন থাকলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ছিল পরাধীন। ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত বিগত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, প্রশাসনের সর্বত্র দলীয়করণ-আত্মীকরণ, সাধারণ জনগণের উপর দলীয় কর্মীদের খবরদারিত্ব, দলীয় লেজুরবৃত্তি, সর্বত্র তোষামোদী-চাটুকারিতা, টেন্ডারবাজি যেভাবে অতিসাধারণ-স্বাভাবিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিয়মের বিষয় হয়ে উঠেছিল তাতে দেশের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ-হতাশা এবং ক্ষোভ ধীরে ধীরে জমাট বাঁধছিল- যা শাসকদল টের পায়নি।

শাসকদল টের পায়নি যে, আমলারা যত পায় তত চায়। তাদের বেতন বাড়িয়ে, অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে; গাড়ি-বাড়ি দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট রাখা সম্ভব নয়। এক সময় সরকারি চাকুরি এবং বিসিএসের প্রতি মেধাবী ছাত্রদের আগ্রহ তেমন না থাকলেও এখন তারা সরকারি চাকুরিকে সোনার হরিণ ভেবে নিয়েছে। প্রয়োজনে টাকার থলে নিয়ে তারা নিয়োগদাতাদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে। এতে কি একটা বিষয় পরিষ্কার নয় যে, সরকারি চাকুরিতে কী পরিমাণ ঘুস-দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে? মূলত সকল মানুষই মানসিকভাবে দুর্নীতিপ্রবণ হয়ে উঠেছিল।

শাসকদল টের পায়নি, তাদের স্বীকৃত-অনুমোদিত, অনুগামী-অনুগত সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রত্যেকেই জনগণের সেবক না হয়ে শাসক হয়ে উঠেছিল। তাদের দাপটে সাধারণ মানুষ হাঁফিয়ে উঠেছিল। এসব নেতার অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধিও ছিল চোখ কপালে তোলার মতো। এদের কাছে রাজনীতি একটি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক সংগঠন হলেও মূলত এটি ‘ওয়ান মেন শো’ বা নেত্রীনির্ভর দল হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতা বা সিদ্ধান্তগ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল এককেন্দ্রিক। ফলশ্রুতিতে, প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে যারাই ছিলেন তারা সকলেই স্তুতিকারক বা প্রশংসাকারী হয়ে উঠেছিলেন। সকলেই ‘জ্বী হুজুর-জ্বী হুজুর’-এ অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষি নয়। পদ্মা সেতু-ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সমুদ্রের নিচে টানেল রোড ইত্যাদি উচ্চমার্গীয় উন্নয়ন দেখে সে পুলকিত হয় বটে কিন্তু দিন শেষে তারা দু’মুটো খেয়ে পরিবার নিয়ে শান্তিতে ঘুমুতে পারলেই খুশি। আমাদের মতো অল্পতে খুশি হওয়া জাতি পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। কিন্তু তাও তাদের জন্য সহজ করা যায়নি। বাজারের নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য, জীবনযাত্রায় উচ্চব্যয় তাকে প্রতিনিয়ত অস্থিরতায় রেখেছে।

বিগত সময়ে দেশের কি কোনো প্রকার উন্নয়ন হয়নি? নিশ্চয়ই হয়েছে এবং এর তালিকাও বেশ দীর্ঘ। কিন্তু এর বিপরীতে আমাদের বৈদেশিক লোনের পরিমাণও বেড়েছে হৈ হৈ করে। যা সময়মতো পরিশোধ করার সামর্থ্য প্রশ্নবিদ্ধ।

তার উপর আছে পাড়া-মহল্লায় পাতিনেতাদের দৌরাত্ম্য-খবরদারিত্ব। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নেতা-পাতি নেতা, মন্ত্রী-এম পি, আমলারা যে কী পরিমাণ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন তা দেশবাসীর অজানা নয়। দুর্নীতি যে কী পরিমাণ বিস্তারলাভ করেছে তা বর্ণনাতীত। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সমাজের একটা শ্রেণি ভোগ-বিলাসে মত্ত আর একটি শ্রেণি জীবন-জীবিকার নিরাপত্তায় হন্যে হয়ে আছে। এতসব রাষ্ট্রীয় অনাচারের কারণে বিগত সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের অসন্তোষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময় তা প্রবল হয়ে আজকের পরিণতি ডেকে এনেছে।

মূলত কোটা-সংস্কার আন্দোলন ছাত্রদের একটি যৌক্তিক আন্দোলন ছিল যার সূত্রপাত ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল। যদিও ছাত্ররা সর্বপ্রকার কোটা বাতিলের স্লোগান দেয়নি তথাপি সে সময় আন্দোলনের তোপে সরকারপ্রধান ‘সব কোটা বাতিল’ ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদের এ যৌক্তিক দাবিকে তাচ্ছিল্য করেছিল। সরকারের উচিত ছিল এ নিয়ে ছাত্রদের সাথে সমঝোতা করা।

বিগত সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান নিয়ে তারা সবসময়ই আন্তরিক ছিল এবং সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা উন্মুক্ত করেছে। যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়ণ সুবিধা, সরকারের নানা নাগরিক সেবাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ সুবিধা এমনকি চাকুরি প্রত্যাশীদের কাছে ‘সোনার হরিণ’খ্যাত বিসিএস-এও তাদের জন্য বিশেষ কোটা পর্যন্ত বরাদ্ধ রাখা হয়েছিল। ভিন্ন মতাদর্শের গুটিকয় রাজনৈতিক দল এতে অখুশী হলেও বৃহত্তর নাগরিক সমাজ এ নিয়ে টুঁ শব্দটিও করেনি।

বিপত্তি বাঁধে যখন সরকার তার ভালো জিনিসকে নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করলো। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানে মানুষের উল্লেখযোগ্য অভিযোগ না থাকলেও তাদের নাতিপুতিদের জন্য একই সুযোগ (বিশেষত সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে) কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি ছাত্রসমাজ।

সকল প্রকার কোটার স্থিতি চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের হাইকোর্টে মামলা, সরকারের রিট পিটিশন- এসবের মধ্যে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী এমনকি সাধারণ নাগরিকগণও সরকারপ্রধানের দাম্ভিকতা খুঁজে পেয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মনেও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। একটি বাংলা প্রবাদ আছে- ‘তুষের আগুন ধিকি-ধিকি জ্বলে’।

২০১৮ এ আগুন নেভানো গেলেও তার ভিতরের ক্ষোভের আগুন কিন্তু এতটুকুও নিভে যায়নি।২০২৪-এ এসে তা দাউ-দাউ শিখায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো এবং বিস্ফোরিত হলো। এখানেও সরকারপ্রধানের সেই পুরোণো অহং-দম্ভ প্রকাশ্য হলো। চলমান পরিস্থিতিতে ’৭১ টিভির সাংবাদিক রূপার প্রশ্নটি সংগত ও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তার জবাবে সরকারপ্রধান এমন ভঙ্গিমায় তার জবাব দিলেন যার অন্তর্গত অর্থ বা ভাব কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। সমাধানযোগ্য বিষয়টিকে তিনি জঠিল করে তুললেন।

রাজাকার শব্দটি আওয়ামী সরকার এত বাজেভাবে; এত বেশি গড়পরতা ব্যবহার করেছে যে- সাধারণ মানুষ তা পছন্দ করেনি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এদেশে রাজাকার তো ছিলই- তাদের অনেকেই এখনো জীবিত আছেন! তা ছাড়াও নব্য রাজাকারও তো প্রতিটি দেশে জন্মায়! তাই বলে, সরকারের বিরোধিতা করলে, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে যুক্তিসংগত বিতর্ক করলে, ১৫ই আগস্টসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে দ্বি-মত করলে, দুর্নীতি-দুরাচার নিয়ে কথা বললেই- রাজাকার!

না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। রাজাকার শব্দের অতি ও যথেচ্ছ ব্যবহারেও মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে যারা বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত, যারা মহান স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে কিন্তু আওয়ামী রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত নয় তাদেরও ঢালাওভাবে রাজাকারের দোসর বলা নিতান্তই ভুল ছিল। এতে এসব মানুষরাও আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অনন্য কাব্যের জন্ম দিলো। এ কাব্যের কারিগর ছাত্রসমাজ হলেও এটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নিলো। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়- কোনো একটি দেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা যখন মিছিলে হাত মিলায়; এক সূরে-এক তালে কণ্ঠ ছাড়ে; বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে বুক পেতে দেয় তখন পৃথিবীর কোনো পরাশক্তির পক্ষেও তাকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পুলিশ-র‌্যাব-আর্মি সবই সেখানে তুচ্ছ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর ছোটো-বড়ো কিছু ভুলে দলটির ভিতর-বাহির বহু আগেই লডর-ফডর (যাচ্ছেতাই অবস্থা) হয়ে গিয়েছিল; ৫ই আগস্ট ২০২৪ যার চূড়ান্ত পরিলতি পেল। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের ভুল এবং আত্মঅহমিকার কারণে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল কীভাবে নিমিষেই লুটিয়ে পড়ে আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম ।

‘বঙ্গবন্ধু একাই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন’- আমি মানি না। বহুজনের অংশগ্রহণে-ত্যাগে যা অর্জিত হয় তার মালিকানা বা কৃতিত্ব কখনো একক নয়- তা সমগ্রের। বঙ্গবন্ধু এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতিমুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক। ’৫২, ’৬৯, ‘৭০ ’৭১-এ তাঁর সর্বব্যাপী নেতৃত্ব এবং বিশেষ করে ৭ই মার্চের সেই কালজয়ী ভাষণের পথ বেয়ে মাত্র ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে আমরা পেয়েছি ২৬শে মার্চ-এর বিজয়ানন্দ।

বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা অর্জনের সঠিক ইতিহাস কখনোই রচিত হবে না। যথার্থই তিনি বাঙালির জাতির পিতা। যারা এ সত্যটিকে অস্বীকার করেন বা করার প্রয়াস করেন, তারা নিজেকেই অসম্মানিত করেন; মানসিক দীনতার পরিচয় দেন। তবে, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জনের এ মহানায়ককে বিশেষত, আওয়ামী লীগ বিগত ৫০ বছরে তাদের রাজনীতির বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা তাঁকে এত বেশি ব্যবহার করেছেন যে, আওয়ামী রাজনীতিবিদরা খেয়ালই করেনি প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা তাঁকে একপাক্ষিক ও এক দলীয় করে তুলেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই ধুলায় মলিন করে ফেলেছেন। এ সকল রাজনীতিবিদ ভুলেই গেছেন যে, ‘অতি ব্যবহারে অতি মূল্যবান ধাতু স্বর্ণও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়’।

বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং বাড়িটি কখনোই কোনো রাজনৈতিক অফিস কিংবা ঠিকানা নয়। এটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অনন্য ঠিকানা। এখানে বঙ্গবন্ধু বাস করতেন। এখানে বসেই বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক সাথী-যোদ্ধাদের নিয়ে সভা করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি আমাদের স্বাধীনতার তীর্থবাড়ি। তাই, যারা বা যাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এ বাড়িটিকে আক্রমণ করা হয়েছে; পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; যারা এ বাড়িটির সামনে লুঙ্গিড্যান্স করেছে- তাদের ঘৃণা করার ভাষাও আজ তিরোহিত।

সরকার পতনের পর এখন যা চলছে তা মোটেই ভালো বার্তা নয়; লক্ষণ বেগতিক! এখন যারা ক্ষমতায় আছেন; যারা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা নিজেরাই যেন আবার লডর-ফডর হয়ে না পড়েন; পুনশ্চ না হয়ে উঠেন- সচেতন থাকুন। মনে রাখতে হবে, প্রজন্ম ও প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি কোনো স্থির বিষয় নয়; প্রজন্ম আসে প্রজন্ম যায়। যুগে-যুগে প্রজন্মের রুচি-রূপ এবং দৃষ্টিভঙ্গিও পালটায় কিন্তু ইতিহাস তার জায়গায় ঠিকই থেকে যায়। ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের পাথেয় হোক।

একটি বৈষম্যহীন-দুর্নীতিমুক্ত-অসম্প্রদায়িক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় প্রত্যয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের সংগ্রাম ও ত্যাগ যেন ভুলে না যাই। আন্দোলনকারী-আন্দোলন সমর্থনকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং নিহত সকল প্রাণের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও স্মরণ।

চারুউত্তম বড়ুয়া: কলাম লেখক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সম্পাদক, চারুলতা-চারুদেশ