সেপ্টেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। চলতি (অক্টোবর) মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের কিছু অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে। সেই সঙ্গে এ মাসে বঙ্গোপসাগরে একাধিক লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি রূপ নিতে পারে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে।

ব্যক্তি নয়, দলের সার্বিক ভোটপ্রাপ্তিতে নির্ধারণ হবে সংসদে আসন। আর একটি দল প্রকৃত অর্থেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে। মাত্র কয়েক শতাংশ ভোট কমবেশি হওয়ার কারণে সংসদে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হবে না। কোনো দল ৪০.২১ শতাংশ ভোট পেয়েও সংসদে মাত্র ৬২টি আসন বা ৩২.৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র ৩০টি আসন পাওয়ার ঘটনা আর ঘটবে না।

গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিতে বেড়েছে তিস্তার পানি। এরই মাঝে শনিবার দুই দফায় গজলডোবা বাঁধ দিয়ে প্রায় ১১ হাজার কিউমেক পানি ছেড়েছে ভারত। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, এই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে আগে থেকে তাদের কিছু জানা ছিল না। খবর বিবিসি বাংলার।

বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, ‘ভারত যে বাড়তি পানি ছেড়েছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে অফিশিয়াল কোনো খবর নেই।’

গজলডোবা বাঁধ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত ৮টায় প্রায় ছয় হাজার ও তারপরে রাত সাড়ে ১২টায় আরো ৪ হাজার ৭০০ কিউমেকের বেশি পানি ছাড়া হয়েছে।  বাঁধের কিছু কবাট বছরের একটা বড় সময়ই খোলা থাকে। যখন কোনো কারণে পানির পরিমাণ বাঁধের ধারণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন সেই বাড়তি পানি ছেড়ে দেয়ার জন্য বাঁধের আরো গেট খুলে দেয়া হয়।

গজলডোবা বাঁধ দিয়ে হঠাৎ করে এত বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সেচ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের মতো ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলায়ও তিন দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর ভারতের অংশের বেশ কয়েকটি জায়গায় পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং বাঁধের পানি ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ওই পানি বের করার জন্য এক পর্যায়ে আরো গেট খুলতে হয়েছে।

শুক্রবার কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত নদীর দুই তীরেই লাল সতর্কতা জারি হয়েছিল। শনিবার মাঝরাতে মেখলিগঞ্জের উজান অঞ্চলেও লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া

সরদার উদয় রায়হান বলেন, মে থেকে শুরু করে জানুয়ারি পর্যন্ত এই সময়ে বাঁধ সাধারণত খোলাই থাকে। মূলত বর্ষাকালে বাঁধ বন্ধ রাখা হয় না। বাংলাদেশের যে বাঁধ, সেটিও এই সময়ে খোলাই থাকে। এখন যেহেতু বর্ষাকাল, তাই সেচেরও দরকার নাই।

বাঁধ দেয়ার মূল কারণ তো সেচ। তাছাড়া এ সময় পানির পূর্ণ প্রবাহ থাকে। তাই ব্যারেজের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে সবসময়ই খোলা রাখা হয়।

বাঁধের গেট যেহেতু বর্ষাকালে খোলাই থাকে, তাই আলাদা করে এ ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয় না। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে ড্যাম বা বাঁধ দেয়া হয়, তা থেকে পানি ছাড়ার আগে জানাতে হয়। কারণ ড্যামের বিষয়টা ভিন্ন। ড্যামে পানির ধারণক্ষমতা বেশি। এখানে পানি জমিয়ে রাখে, পরে রিলিজ করে। ব্যারেজের ধারণক্ষমতা ড্যামের চেয়ে অনেক কম।

তার মতে, বাংলাদেশ যে ২ হাজার ২৬৭ কিউমেক পানি প্রবাহের কথা জানে, তা এই মৌসুমের স্বাভাবিক প্রবাহ। কিন্তু যদি সত্যিই ওই প্রায় ১১ হাজার কিউমেক হয় তাহলে এতক্ষণে অনেক বড় বন্যা হয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশে।

রংপুর প্রতিনিধি জানান, উজানে পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্য পর্যন্ত তিস্তায় পানি বেড়েছে ১৫ সেন্টিমিটার। এতে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উজানের ঢল সামলাতে লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

সূত্র: কালের কন্ঠ

 

আগামী অক্টোবর মাসে জ্বালানি তেলের দাম কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। চলতি মাসে জ্বালানির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের  সঙ্গে মিল রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হয়েছিল। তবে উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল (জেট ফুয়েল) ও ফার্নেস অয়েলের দাম এখন থেকে নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।

বিইআরসি’র সূত্র বলছে, অক্টোবর মাসের জন্য জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের প্রস্তাব এখনো পায়নি। তবে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। দাম নির্ধারণের প্রস্তাব আসা মাত্রই প্রক্রিয়া শুরু করবেন।

অক্টোবরে জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ হবে কিনা জানতে চাইলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপদেষ্টা বাইরে আছেন। আসলে সিদ্ধান্ত হবে।

এতদিন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েল নির্ধারণ করে আসছিল। অক্টোবর মাস থেকে এটি কার্যকর হবে।

জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েলের দাম এখন থেকে নির্ধারণ করবে বিইআরসি। তবে অন্য জ্বালানির বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেয়নি। 

উল্লেখ্য, বিইআরসি আইনে সকল ধরনের জ্বালানির নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসিকে দেয়া হয়েছে। তবে বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ার অজুহাতে এতদিন জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েলের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিপিসি। ২০০৩ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন পাসের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও আধা-বিচারিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয়।

গ্যাস ও বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা এবং ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত বিইআরসি মূলত ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত ১৩টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আর ১২টি প্রবিধানমালা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আইনে সকল ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার দেয়া প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি। 

২০২৩ সালে হঠাৎ করেই আইন সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে দাম সমন্বয় (কম/বেশি) করার বিধান যুক্ত করা হয়। তারপর থেকে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করায় কার্যত বেকার হয়ে পড়ে আধা-বিচারিক প্রতিষ্ঠানটি। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করায় ইউটিলিটিগুলোর নানা রকম অসঙ্গতি সামনে আসতো।

গত ২৭শে আগস্ট নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের আইন বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের একক ক্ষমতা ফিরে পায় বিইআরসি। গেজেটে বিইআরসি আইনে ৩৪ (ক) ধারা সংযোজন করে নির্বাহী আদেশে দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়া হয় নির্বাহী বিভাগকে। গেজেটে ৩৪ (ক) ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম  করপোরেশনের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন-উল আহসান বলেন, ফার্নেস অয়েল ও জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)তে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম নির্ধারণের নির্দেশনা আসেনি। 


কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর  জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, আইন অনুযায়ী এখন থেকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সব জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করবে। আগামী মাস থেকে বিইআরসি’র মতামতের ভিত্তিতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ না হলে আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ফলে জনগণ কোনো সুবিধা পায়নি। বাজারে কোনো প্রভাবও পড়েনি। এতে শুধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে। আমরা অন্তত ৩ বছরের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। বিগত সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিইআরসি’র আইনকে শুধু খর্ব করেছে বললে ভুল হবে, বিইআরসি’র ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে। তাই বিইআরসিকে তার প্রকৃত শক্তি ফিরিয়ে দিতে হবে। 

ক্যাব বলছে, বিইআরসি আইনের সংশোধনী ৩৪ ক বাতিল হয়েছে। ২০১২ সালে বিইআরসি প্রস্তাবিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের (পেট্রোল, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, কেরোসিন ইত্যাদি) মূল্যহার নির্ধারণ সংক্রান্ত তিনটি প্রবিধানমালা কার্যকর দেখতে চাই ক্যাব। ক্যাব’র পক্ষ থেকে দেশের জ্বালানি খাতের নিরাপত্তায় ১১ দফা দাবি জানানো হয়। অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয় ও পণ্য মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং সংকট মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ৩ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি না করার দাবি জানানো হয়। বিইআরসি’র আওতায় বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪-এর আলোকে জ্বালানি খাত সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য একটি ‘জ্বালানি খাত সংস্কার কমিশন’-এর কথা বলা হয়েছে। কস্ট প্লাস নয় কস্ট বেসিসে লুণ্ঠনমুক্ত মুনাফাবিহীন সরকারি জ্বালানি সেবা দাবি ক্যাব’র।

সূত্র : মানবজমিন

 

 

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত উভয় ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে তা তুলে ধরেন তিনি।

শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গত সাত বছর যাবৎ মায়ানমার হতে আগত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে আসছে। এর ফলে, আমরা বিশাল সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সৃষ্ট এই সংকট বাংলাদেশ ও আমাদের অঞ্চলের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত উভয় ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ড. ইউনূস বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখা এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা অব্যাহত চাই। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংঘটিত হওয়া ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে করে নিজ দেশে স্বাধীন এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনধারণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরীতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবীদার। এ লক্ষ্যে রোহিঙ্গারা যাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করে তাঁদের নিজ ভূমি রাখাইনে ফিরে যেতে পারে, তার পথ সুগম করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা বিবেচনায় রেখে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে একযোগে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করতে প্রস্তুত।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে গত তিন মাসে স্থগিত করা হয়েছে সরকারি চাকরির অর্ধশতাধিক নিয়োগ পরীক্ষা। আবার পাঁচ লক্ষাধিক পদ শূন্য থাকলেও প্রকাশ করা হয়নি বড় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। কভিড-১৯ বিধি-নিষেধের কারণেও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল নিয়োগপ্রক্রিয়া। এতে সরকারি অফিসগুলোতে রেকর্ড পাঁচ লাখ তিন হাজার ৩৩৩টি শূন্যপদ আছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারি অফিসগুলোতে অনেক পদ খালি আছে। শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে। অন্যান্য দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে।

কিছুদিনের মধ্যেই পিএসসি পুনর্গঠন করা হবে। এরপর বিসিএস পরীক্ষাসহ পিএসসির সব নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

৫ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩টি পদ শূন্য

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি অফিসে শূন্য পদের সংখ্যা বেড়েছে। যদিও আগের চার বছরে শূন্যপদ কমেছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কভিড-১৯ বিধি-নিষেধের কারণে সরকারি চাকরিতে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায় সব নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ হয়নি। 

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, নতুন সরকার আসার পর থেকে নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সেভাবে চলা শুরু করেনি। তবে সরকারের একটি নির্দেশনা এলে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সহজে শুরু করা যাবে। এতে নিয়োগজট কমবে।

পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত আছে। এ ছাড়া পিএসসি নিজে থেকে পরীক্ষাগুলো শুরুর আগে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।

পরীক্ষার আগেই অনিয়ম-দুর্নীতি

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর ৬৫৬টি পদে ২০২৩ সালের ২৬ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছর তিন মাস পরও কোনো পরীক্ষা হয়নি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শন (সেফটি) ৪১টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি। এরপর ২০২৩ সালের ২৬ জুন আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি। এর পরও নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীর ৫১৬টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। সেই পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয় ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। গত ৫ জুলাই রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পিএসসির সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ ছাড়া গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার শূন্যপদে নিয়োগের চাহিদাপত্র দেওয়ার পরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব করছে পিএসসি।

স্থগিত আছে অর্ধশতাধিক নিয়োগ পরীক্ষা

পেট্রোবাংলার লিখিত পরীক্ষা গত ১৭ সেপ্টেম্বর স্থগিত করা হয়। পেট্রোবাংলা এবং এর অধীন কম্পানিতে কেন্দ্রীয়ভাবে সরাসরি ৯ ক্যাটাগরির পদে ২০ ও ২৭ সেপ্টেম্বর এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সাধারণ বীমা করপোরেশন গত ২ সেপ্টেম্বর সহকারী ম্যানেজার পদে নিয়োগের এমসিকিউ পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

একইভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর এবং কম্পিউটার অপারেটর পদে অনুষ্ঠিতব্য ১৯ জুলাইয়ের লিখিত পরীক্ষা, শ্রম অধিদপ্তরের ১৮ জুলাইয়ের বিভিন্ন পদের মৌখিক পরীক্ষা, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ফিন্যানশিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মচারী নিয়োগ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জুনিয়র অফিসার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ১৩ ক্যাটাগরি পদের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা এবং লিখিত পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।

সূত্র কালের কন্ঠ