টমেটো সোলানাম লাইকোপারসিকাম উদ্ভিদের ভোজ্য রসালো ফল। বিভিন্ন উপায়ে এটি খাওয়া হয়। কাঁচা বা রান্না করে, খাবারে সস বা সালাদ হিসেবে এবং পানীয়তে। এর পুষ্টিগুণও অনেক। তবে শুধু টমেটো নয়, এর জুস খেলেও মিলবে একাধিক চোখ ধাঁধানো উপকার।
সে কারণে পুষ্টিবিদদের একাংশ প্রতিদিন নিয়ম করে টমেটোর জুস খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে প্রাণঘাতী সব রোগের ফাঁদ এড়ানো যাবে বলে দাবি করছেন তারা। তাহলে জেনে নেয়া যাক নিয়মিত টমেটোর জুসে চুমুক দিলে ঠিক কোন কোন উপকার মিলবে?
পুষ্টির খনি
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের কথায়, টমেটোর জুসে রয়েছে পুষ্টির ভাণ্ডার। এই পানীয়তে মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি, ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৯, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজসহ একাধিক উপকারী ভিটামিন ও খনিজ।
এছাড়া এই পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিলে দেহে প্রবেশ করে অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত।
ইনফ্লামেশনের বাড়াবাড়ি কমবে
শরীরের সমস্ত ক্রনিক রোগের পেছনে কলকাঠি নাড়ে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ। তাই নীরোগ জীবন কাটানোর ইচ্ছা থাকলে যেনতেন প্রকারে ইনফ্লামেশন প্রশমিত করতে হবে। এ কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে টমেটোর জুস। এতে রয়েছে লাইকোপেন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদান প্রদাহ প্রশমিত করার কাজে একাই একশো। তাই নিয়মিত টমেটোর জুসে চুমুক দেয়া আবশ্যক।
হার্ট থাকবে সুস্থ-সবল
আজকাল বয়স মাত্র ৩০ পেরোনোর পরই অনেকে প্রাণঘাতী হার্টের অসুখের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই বিশেষজ্ঞরা সব বয়সিদেরই হার্টের যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ভালো খবর হলো, আপনার হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ফেরানোর কাজে মহৌষধি হয়ে উঠতে পারে টমেটোর জুস।
এই জুসে উপস্থিত লাইকোপেন ও বিটা ক্যারোটিন হার্টের খেয়াল রাখার কাজটি করে বলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই হার্টের হাল ফেরাতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ টমেটোর জুস পান করুন।
এড়ানো যাবে ক্যানসারের ফাঁদ
ক্যানসারের মতো জটিল অসুখে আক্রান্ত হলে রোগীর পাশাপাশি তার পরিবারও ভুগতে থাকে। তাই সারা বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সমবেতভাবে ক্যানসার প্রতিরোধ করার ডাক দিয়েছেন। এ কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে টমেটোর জুস। এতে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যানসার প্রতিহতের কাজে সাহায্য করতে পারে। তাই নীরোগ জীবন চাইলে এই পানীয়তে চুমুক দিতে ভুলবেন না।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
প্রতিদিন এক গ্লাস করে টমেটোর জুস খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে। টমেটোর জুসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা রক্তে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়।
ওজন কমাতে সিদ্ধহস্ত
মানব দেহে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে টমেটো। এর জুস খেলে সেটি আপনার খিদে মিটিয়ে রাখে। ফলে ওজন কমতে সাহায্য করে এবং শরীরকে দুর্বলবোধ করতে দেয় না।
ত্বকের জন্য ভালো
দাগমুক্ত ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে প্রতিদিন এক গ্লাস করে টমেটোর জুস খাওয়া অবশ্যই উচিত। টমেটোর জুস চামড়ার ট্যান দূর করে, ত্বকের কালো ছোপ দূর করে। সেইসঙ্গে অ্যাকনে ও ব্রণ নিরাময় করে। লোমকূপ বুজিয়ে দেয় এবং তৈলাক্ত ত্বকের সিবাম ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
কারা খাবেন না?
অনেকেই টমেটোর জুস খাওয়ার পর গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যার খপ্পরে পড়েন। তারা অবশ্যই টমেটোর জুস এড়িয়ে যান। এছাড়া নিয়মিত টমেটোর জুস খেলে ইউরিক অ্যাসিডের ব্যথা বাড়তে পারে। তাই এই রোগে আক্রান্তরা টমেটোর জুস থেকে দূরে থাকুন।