আরিফুর রহমান, তালতলী প্রতিনিধি, বরগুনা।।

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার পায়রা নদীতে নৌ র‌্যালি এবং তালতলি, বরগুনায় (বরিশাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) মানববন্ধন করেছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, মৎসজীবী, ইলিশ উদ্যোক্তা, পরিবেশকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসাবে এদিন এশিয়া ডে অফ অ্যাকশন টু #EndCoal এর অংশ হিসাবে বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ, নদী রক্ষা এবং শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের দাবিতে এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি), এশিয়া এনার্জি নেটওয়ার্ক (এইএন), এবং গ্লোবাল ফাইট টু ইন্ড ফসিল ফুয়েল এর সাথে যৌথভাবে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং পায়রা নদী ইলিশ রক্ষা কমিটি এই কর্মসূচি আয়োজন করে।

পায়রা নদীর দূষণের কারণে ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। কয়েক বছর আগে তালতলীতে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে নদীর দূষণ এবং ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বের হওয়া গরম পানির প্রভাব পড়ছে নদীর পরিবেশে, যার ফলে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও, জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণ পলিথিন আটকে জাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশের খাল বন্ধ হওয়ার কারণে কৃষিজমির উৎপাদন কমে গেছে। তরমুজ, মরিচ, সূর্যমুখী ও ডালের ফলন আশানুরূপ না হওয়ায় কৃষকরাও বিপাকে পড়েছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কয়লার ছাই নদীতে ফেলে দেওয়ার ফলে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, এবং জেলেরা নদীতে জাল ফেলতে পারছেন না। অনেক জেলের জালে কয়লার জাহাজের ধাক্কায় জাল কেটে যায়, ফলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে চুলকানি রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দিচ্ছে, যা তাদের দৈনন্দিন কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাবে এ অঞ্চলের মানুষ নানা ধরনের রোগে ভুগছে। হাজার হাজার কৃষি জমি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি না করায় অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।

এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে পায়রা নদী ইলিশ রক্ষা কমিটির সভাপতি সুলতান সিকদারের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন ও নৌ র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় কৃষক, জেলে, প্রকল্প এলাকার ভুক্তভোগীসহ পরিবেশকর্মী, এনজিওকর্মী ও ইলিশ উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন। নলবুনিয়া ইলিশ রক্ষা কমিটির সভাপতি মো. শাহাজান শেখ, জেলে বাবুল হাওলাদার, এবং শুভ সন্ধ্যা রক্ষা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর মিয়া মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন।