দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের ৭৭ উপজেলার ৫৮৪টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আকস্মিক এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই ১১ জেলার ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৫ জন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯ পরিবার।

ধীরগতিতে উন্নতি

ফেনী, কুমিল্লাসহ পাঁচ জেলায় ধীর গতিতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার তথ্য দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

শুক্রবার সকালে কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাত হয়নি। সেই সঙ্গে উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস পাওয়া শুরু করেছে।

তাতে করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ধীর গতিতে উন্নতি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মনু, খোয়াই ও ধলাই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানেও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময়ে ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

বুলেটিনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে; যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে বলে বুলেটিনে বলা হয়েছে।

এছাড়া উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

কোন নদী বিপৎসীমার কত উপরে

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টায় খোয়াই নদীর পানি সিলেটের বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর হবিগঞ্জ পয়েন্টে এই নদীর পানি যাচ্ছিল ১৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যেখানে দেবীদ্বার পয়েন্টে পানি যাচ্ছিল বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

চট্টগ্রামের রামগড় স্টেশনে ফেনী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

চট্টগ্রামে হালদা নদীর পানি নারায়ণহাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যাচ্ছিল, আর পাঁচপুকুরিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

সকালে মৌলভীবাজার পয়েন্টে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

আর ফেনীর পরশুরাম স্টেশনের সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হওয়ায় সেখানকার মুহুরী নদীর বিষয়ে তথ্য দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

প্রধান উপদেষ্টার তহবিলে অনুদান আহ্বান

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেছেন, “সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহায়তা প্রদানের জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই মহতি আগ্রহকে সরকার স্বাগত জানায়।”

আগ্রহীরা অনুদান জমা দিতে পারবেন এই হিসাবে: প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, হিসাব নম্বর: ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩।

সমন্বয় সেল গঠন

বন্যা মোকাবেলায় ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা সমন্বয় সেল’ গঠন করার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমন্বয় সেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে প্রাপ্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে।

প্রয়োজনে ০২-৪৭১১৮৭০০, ০২-৪৭১১৮৭০১, ০২-৪৭১১৮৭০২, ০২-৪৭১১৮৭০৩, ০২-৪৭১১৮৭০৪, ০২-৪৭১১৮৭০৫, ০১৩১৭৭৪৯৯৮০ এবং ০১৮২০১১৭৭৪৪ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এর আগে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে।

তথ্য ও সহযোগিতার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০২৫৫১০১১১৫ নম্বরে ফোন করা যাবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করার কথা জানিয়েছে। দুর্গতদের ০১৩৩১৮২৩৪৯৬২, ০১৭৬৫৪০৫৫৭৬, ০১৫৫৯৭২৮১৫৮ ও ০১৬৭৪৩৫৬২০৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ করতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। সহায়তার প্রয়োজন হলে ফোন করা যাবে ০১৩১৮২৩৪৫৬০ নম্বরে।

আর বন্যার মধ্যে টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।

বিটিআরসির ইমার্জেন্সি রেসপন্স দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে +৮৮০২২২২২১৭১৫২ নম্বরে ফোন করতে হবে। বিটিআরসির কল সেন্টার ১০০ ব্যবহার করেও ওই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।